আজ খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের জেলা প্রশাসকদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। দুটি বিভাগের জেলা ওয়ারী ৬নং সিরিয়ালে সাতক্ষীরা জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন, জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ।
এ সময় জেলা প্রশাসক ও জেলা আ’লীগ সভাপতি সাতক্ষীরার বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সাতক্ষীরা জেলাতে করোনা প্রতিরোধে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, চিংড়ি প্রধান জেলা সাতক্ষীরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে বড় বড় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ বিষয় নিয়ে মাছ চাষিরা কিছুটা আশংকার মধ্যে আছে। আমরা সম্মিলিত ভাবে এই জেলাতে কাজ করে যাচ্ছি। আপনার ৩১ দফা নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করব। এবং ত্রান বিতরণ নিয়ে যে দুর্নীতি করবে তার ঠিকানা হবে জেল। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সাতক্ষীরা জেলাতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে দুধ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। সামনে চিংড়ি মৌসুমে চিংড়ি রপ্তানি করতে না পারলে চিংড়ি খাতের সাথে জড়িতরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেটিও তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক। এছাড়ও জেলা প্রশাসক জেলাবাসীকে ঘরে রাখতে একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠান শুরু করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শিশু খাদ্য হিসাবে তরল দুধ রিলিফ হিসেবে দেয়া যায় কিনা এবং দুধ ও চিংড়ি সংরক্ষণের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলার পর মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদের সাথে কথা বলতে চান।
এসময় জেলা আ’লীগ সভাপতি সাতক্ষীরাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আপনার সরকারের সময়কালে আপনার নেতৃত্বে সাতক্ষীরা জেলা ওপর দিয়ে সিডর, আইলা, বুলবুলের মত নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ সফলভাবে আমরা মোকাবেলা করেছি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধ করেছি। এখন আপনি করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। করোনা মোকাবেলায় যোদ্ধা ডাক্তার ও নার্সদের আমরা দলমত নির্বিশেষে সাহায্য করব। আপনি নির্দেশনা দিবেন। সেই মোতাবেক আমরা রমজানের আগেই বাংলাদেশ থেকে করোনা মুক্তির চেষ্ট করব ইনশাল্লাহ। আমাদের সাতক্ষীরাতে গরীব মানুষ বেশি। প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের বাস এখানে। আমাদের আপনি অনেক দিয়েছেন। আমি অনুরোধ করছি আমাদের আরেকটু বরাদ্দ বেশি দিন। এসময় প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরা জেলায় আরো ত্রান বরাদ্দের আশ্বাস প্রদান করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসক মারফৎ সকলের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
নির্দেশনা গুলো:
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
খাদ্যশস্য উৎপাদন, কাটা এবং পরিবহনের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
খাবার এবং ঔষধের দোকান খোলা থাকবে।
এখন যারা কাজ করতে পারছে না তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে।
ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। একখন্ড জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।
কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্য ২ লক্ষ মে: টন এর বেশি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করা হবে।
ক্ষতগ্রস্ত কৃষকের মাঝে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে।
কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, তাতী, জেলেসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে।
কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা থাকবে। ক্ষুদ্র/মাঝারি শিল্প, ফুল, ফল, পোল্ট্রি, মৎস্য খাতের সাথে যুক্তদের ৫℅ হার সুদে ঋণ দেয়া হবে।
সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
প্রত্যেকে যার যার এলাকা সুরক্ষা করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আরো যোগ দেন, সাতক্ষীরা সদর ০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, তালা-কলারোয়া ০১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার) , জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর লে. কর্ণেল মো. ফারহান মনির, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. কাজী হাবিবুর রহমান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের তত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগ সাতক্ষীরা’র উপপরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এম এম মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।