করোনা যুদ্ধে পুলিশের কোন প্রশিক্ষণ নেই। কিন্তু জীবন দিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। দেশের সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই সম্মুখ সমরে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন একদিন-প্রতিদিন।
পুলিশের অব্যাহত মানবিক দৃষ্টান্ত সমাজ জীবনে ঘটিয়েছে আলোর বিচ্ছুরণ । বিশ্ব পরিমন্ডলে নতুন এক উচ্চতায় তুলে ধরেছে নিজেদের।
অদৃশ্য এক অনুজীবের বিরুদ্ধে কঠিন এ যুদ্ধে সংক্রমিত প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্যের সুস্থতার দিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
আক্রান্তদের অদম্য প্রত্যয়, সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগানো হচ্ছে নানাভাবে, প্রতিনিয়ত। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) নিজেই পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন।
শুধু তাই নয়; পুলিশ প্রধানের নির্দেশে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও কল্যাণে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ানো হচ্ছে চিকিৎসা ও সেবার আয়োজন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং তাদের মনোবল বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন পুলিশের আইজি ড.বেনজীর আহমেদ।
করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকল্পে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বেসরকারি ইমপালস হাসপাতালে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
৬ টি বিভাগীয় শহরে হাসপাতাল ভাড়া করে সেখানেও প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা যুক্ত করা হচ্ছে। আক্রান্ত সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইউনিট কমান্ডারদের সাথে কথা বলে প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ‘বিশেষ টিম
আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদের নির্দেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে করোনা আক্রান্ত প্রত্যেক সদস্যকে স্বশরীরে পরিদর্শনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ‘বিশেষ টিম’ গঠন করেছে।
একই সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে এই বিশেষ টিমগুলো করোনা আক্রান্ত প্রত্যেক সদস্যকে সরেজমিনে দেখতে যাবে। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোজ-খবর নিবে, হাসপাতাল কিংবা আইসোলেশনে থাকাকালীন তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
পদমর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেক সদস্য যাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান- সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে এই ‘বিশেষ টিম’।
সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পুলিশের সবচেয়ে বড় এই ইউনিটের একটি বিশেষ টিম শুক্রবার (০৮ মে) কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ এবং করোনা চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের বর্ধিতাংশ ডিএমপির ট্রাফিক ব্যারাক, রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদেরকে স্বশররীরে দেখে এসেছে।
এ সময় করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা এই বিশেষ টিমকে সামনে পেয়ে উজ্জীবিত হন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানান। বিশেষ টিমটি সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানে উদ্যোগ নেয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা কালের আলোকে জানান, করোনাকালে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই ছয় জন দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য।
তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত মোট ৯৮ জন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়েছেন।
করোনা আক্রান্তদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ
এর আগে গত ৫ মে ডিএমপির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন এমন সদস্যদের নিয়মিত খাবারের বাইরে ডিম, দুধ, ফলের মতো পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ শুরু হয়।
এছাড়া যারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন তাদের নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি লেবু, মৌসুমি ফল আনারস ও মালটা সরবরাহ করা হচ্ছে।
তাদের মেসগুলো গরম পানির ব্যবস্থা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সব পুলিশ সদস্যের মাঝে ভিটামিন ‘সি’ ও জিংক ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানসহ রেঞ্জের অন্য কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্ত প্রতিটি পুলিশ সদস্যের খোঁজ নিচ্ছেন।
রেঞ্জের ১৩টি জেলায় করোনা আক্রান্ত প্রতিটি পুলিশ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
একইভাবে দেশের অন্যান্য জেলা ও থানায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের পাশে থেকে ঊর্ধ্বতনরা সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা।
সুত্র: দৈনিক কালের আলো ডটকম।