দেশের খ্যাতিমান শিক্ষক, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ঢাকার সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন কিন্তু সাহিত্য- গবেষণা, লেখালেখি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য তার ভূমিকা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আনিসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত বহু বাংলা ও ইংরেজি বই, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিবেচনায় খুবই গুরুত্ব বহন করে।
সদ্য অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ বলেছেন সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ভাবনার ক্ষেত্রে চেতনার বাতিঘরের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ‘একজন শিক্ষক, একজন সমাজ-মনস্ক মানুষ, প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী একজন অনন্য সাধারণ মানুষ হিসেবে তাকে আমরা সব সময় বিবেচনা করি।সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ জাতীয় অধ্যাপক ড: আনিসুজ্জামান স্যারের মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর ব্যক্তিগত ফেইজবুক আইডি তে লিখেছেন বাঙালি জাতি একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্ম-শতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬৭ সালে একটি খবর ছাপা হয়- রবীন্দ্রনাথের গান পাকিস্তানের জাতীয় ভাবাদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচার হ্রাস করতে বলা হয়। এর প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিবৃতিতে আনিসুজ্জামান স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন এবং সেটা বিভিন্ন কাগজে ছাপতে দেন।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, সেই সময় থেকেই আনিসুজ্জামান তার ভূমিকার জন্য মধ্যবিত্ত বাঙালির সংস্কৃতির আন্দোলনের অগ্রগণ্য পথিকৃৎ হয়ে দাঁড়ান।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলছিলেন, ‘দেশের প্রতিটি সংকটকালে তার বক্তব্য, মন্তব্য এবং ভূমিকা দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।’
১৯৯১ সালে গঠিত গণআদালতের একজন অভিযোগকারী ছিলেন তিনি। মহিউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। তিনি বলছিলেন, ‘বাংলা ভাষার ওপর দখল থাকার ব্যাপার না, পুরো বাংলাদেশের স্পিরিটটা, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংবিধানে ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের তাৎপর্য, উৎপত্তি বোঝার মতো যে ক্ষমতা থাকা দরকার সেটার অভাব মেটাতে পেরেছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।