সকালে গিয়েছিলাম আমপান পরবর্তী পরিস্থিতির খবর সংগ্রহে শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি আমপান বিদ্ধস্ত এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম মাটির ঘরবাড়ি গুলো ঝলসে গিয়েছে কোন ঘরের চালের টিন নেই। আমপানের তান্ডবে ঘরের চালের টিন গুলো সব এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।নদীর পানে চেয়ে দেখি কয়েকটি নৌকায় করে কিছু বিদ্ধস্ত উপকুলের মানুষ দের কে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন শ্যামনগর থানা পুলিশ।
আমার পাসে থাকা ব্যক্তিটি বল্লো ফেইজবুকে ছবি দিয়ে হিট হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। আমি তাকে থামতে বল্লাম আর শুধু দেখতে বল্লাম।কিছু দুর পার হয়ে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখলাম সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও শ্যামনগর থানা পুলিশের আয়োজনে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে।সেখান থেকে রাস্তা দিয়ে সাতক্ষীরার উদ্যেশ্যে ফেরার পথে কালিগঞ্জ সীমানার কাছে এসে দেখলাম কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কালিগজ্ঞ থানা পুলিশ ঘূর্ণিঝড় আমপানের তান্ডবে রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ অপসারণের কাজ করছে।
আমি তখন আমার সাথে থাকা ব্যক্তিকে বল্লাম এটাও কি হিট হওয়ার জন্য করছে পুলিশ? সে তাও মানতে চাইলোনা। বেশ চলতে থাকলাম। চলতে চলতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর হাটখুলার কাছে এসে দেখলাম কয়েক কিলোমিটার জুড়ে রাস্তায় ট্রাক, মাইক্রো,নসিমন,করবমন সিরিয়াল দিয়ে দাড়িয়ে আছে। পথচারীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলিলো ঝড়ে গাছ পড়িছে রাস্তায় তাই রাস্তা বন্ধ, পুলিশ গাছ কাটছে। এরপর গাড়ি থেকে নেমে হাটতে হাটতে সামনের দিকে গিয়ে দেখলাম সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) ও সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন (পদন্নোতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ এঁর দিক নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহ্উদ্দিনের তত্বাবধানে সাতক্ষীরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান, সদর থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত আবুল কালাম আজাদ, ইন্সপেক্টর অপারেশন বিপ্লব কান্তি মন্ডল, সেকেন্ড অফিসার প্রদীপ কুমার সানা, এসআই হাবিব ও সঙ্গীয় ফোর্সের সহযোগিতায় ইলেক্ট্রনিক করাত দিয়ে রাস্তায় পড়ে গাছ অপসারণের কাজ করছে।
পড়ে থাকা গাছটি বহু বৎসরের বয়স্ক মেহগুনি গাছ, বেশ মোটা-তাজা।দেখে মনে হলো রোজাদার পুলিশ গুলো গাছ কাটতে গিয়ে বেশ হিম শিম খেয়ে গেলো। এক পর্যায়ে পুলিশ গাছ সরিয়ে দেওয়ার পর তার পর লাইনে দাড়িয়ে থাকা যানবাহন গুলো চলতে শুরু করলো। সাথে সাথে আমি আমার ক্যামেরা পার্সোন কে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলাম। গাড়িতে উঠে আমার পাসে থাকা সেই ব্যক্তিকে বল্লাম সেই শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত আসতে গিয়ে রাস্তায় কত জাগায় দেখলাম পুলিশ রাস্তা অপসারণে নিজ নিজ থানা এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ কেটে অপসারণ করছে। এগুলো কি সব মানুষ দেখানো না হিট হওয়ার জন্যে। তখন আমার পাসে বসা সেই ব্যক্তিটি বল্লো ভাই সরি ভাই। পুলিশ যে এত মানবিক কাজ করে এটা আমার জানা ছিলো না।
সে বল্লো কয়েক বৎসর আগে পুলিশ আমার মটর সাইকেল ধরে কেস দিসিলো সেখান থেকে আমার পুলিশের প্রতি বিরূপ ধারনা। আমি তাকে আরো বল্লাম তুমি টিভি দেখোনা? খবরের কাগজ পড়োনা?ফেইজবুক বা ইন্টারনেট চালাও না? সেখানে দেখোনা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ করোনা ঠেকাতে কি কি জনকল্যাণ মুলক কাজ করে যাচ্ছে। করোনায় কেউ মারা গেলেও পুলিশ তার দাফন কাফন থেকে শুরু করে জানাজার নামাজ পর্যন্ত ও পড়ছে। এমনকি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন পুলিশ। আমি তাকে আরো বল্লাম করোনা ঠেকাতে সারা দেশে এ পর্যন্ত বারো জন পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এসব ঘটনা কি তুমি মোটেও জানোনা? এসময় সে উত্তরে বল্লো সবই জানি ভাই কিন্তু ঐ যে দুই বৎসর আগে পুলিশ আমার গাড়ি ধরে মামলা দিছিলো।এসময় আমি তাকে আরো ভালো করে কাউন্সিলিং দিয়ে বল্লাম দুই বৎসর আগে যে পুলিশ তোমার বাইকে মামলা দিছিলো সেই পুলিশ এখন অন্য কোন জেলায় বদলি হয়ে একই পুলিশের চাকুরীই করছেন। তুমি সেই পুলিশের আচরণে কষ্ট পেয়ে তো পুরো দেশের পুলিশের ভালো কাজ গুলো মুল্যয়ন করবে না,, এটা তো ঠিক না। হয় তো তোমার ডিএল ছিলো না, হয় তো তোমার ইন্সুইরেন্স ছিলোনা তাই পুলিশ তোমাকে মামলা দিয়েছে। তোমার যদি সকল পেপার্স ওকে থাকতো তাহলে কি ঐ পুলিশ তোমাকে মামলা দিতো? সে উত্তরে বল্লো হয় তো না ভাই। পরিশেষে সে স্বীকার করলো যে পুলিশ এখন গল্পে না বাস্তবে জনগনের বন্ধু।
লেখক : জিমি, সিটিজেন জার্নালিস্ট সাতক্ষীরা এন্ড প্রকাশক আপডেট সাতক্ষীরা ডটকম।