ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড উপজেলায় কৃষক নুর ওরফে বুড়োকে কুপিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পাশের জমির পানবরজে পড়ে থাকা হত্যাকারীদের একজনের ব্যবহার করা মাথার টুপি’র (ক্যাপ) সূত্র ধরে ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গ্রেফতাররা হলেন- বরিশখালী গ্রামের মৃত মুছা মোল্লার ছেলে মতিচুর রহমান, একই গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে জিনারুল ইসলাম, সাবার মোল্লার ছেলে শামীম হোসেন। এদের মধ্যে মতিচুর জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, গত বছরের ৫ মে বিকেলে হরিণাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামের বেলেমাঠ থেকে কৃষক নুর ইসলাম ওরফে বুড়ো’র ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই নিহতের ভাই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে হরিণাকুন্ডু থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও মূল ঘটনা জানতে তদন্তে নামে থানা পুলিশ।
একজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর আদালত মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করে।
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ ডিবির পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ নজরুল ইসলাম।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, হত্যার ২-৩ দিন আগে কৃষক নুর ইসলাম ওরফে বুড়ো তার পান বরজের জমির আইল কাটছিল। পাশের জমির মালিক একই গ্রামের মতিউর রহমান জমির আইল কাটতে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে বুড়ো ও মতিচুরের বাক-বিতণ্ডা হয়। হত্যার দু'দিন আগে সন্ধ্যায় মতিচুর বরিশখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানে আসামিদের নিয়ে বুড়োকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ৫ মে বুড়ো নিজ পান বরজে কাজ করার সময় হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে যায়। কিলিং মিশনে অংশ নেয় ছয়জন।
প্রথমে বুড়োকে চড়-থাপ্পড় মারলে সে পড়ে যায়। সেখান থেকে দৌড়ে পাশের পানবরজে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর আসামিরা যার যার মত চলে যায়।
এদের মধ্যে হত্যাকারীদের একজন জিনারুল ইসলাম পাশের জমির তার নিজের পানবরজ যায়। সেখানে তার মাথায় থাকা রক্তমাখা ক্যাপ (টুপি) ভুল করে ফেলে রেখে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ক্যাপটি উদ্ধার করে। মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের চৌকস ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম ক্যাপ’র মালিককে খোজা শুরু করে।
স্থানীয় ও গ্রামবাসী ক্যাপটি জিনারুলের বলে শনাক্ত করলে জিনারুলকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। এদিকে হত্যার পর থেকে জিনারুল ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় আত্মগোপনে থাকে। মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে ঢাকা থেকে জিনারুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিবির পরিদর্শক নজরুল ইসলাম।
ঝিনাইদহে আনার পর, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, ডিবি ওসি আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক নজরুল ইসলাম’র দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে গত ৩১ মে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক শামীম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। শামীমও সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে। এদিকে ক্লু-লেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করায় ডিবি পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
প্রাসংঙ্গত : ঝিনাইদহ জেলায় অপরাধ দমনে বিশেষ অবদান রাখায় ও জেলায় রেকর্ড ব্রেক পরিমান মাদক উদ্ধার,অস্ত্র উদ্ধার ও সাজা প্রাপ্ত আসামি আটক করে ডিবির পরিদর্শক নজরুল ইসলাম কয়েক মাস আগে পুলিশ সুপারের নিকট থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ ইন্সপেক্টর হিসাবে সন্মাননা ক্রেস্ট পেয়েছিলেন। ঝিনাইদহ জেলায় যোগদানের আগে তিনি মেহেরপুর ও সাতক্ষীরা জেলার সদর থাকায় সেকেন্ড অফিসার হিসাবে সুনাম ও দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন।