সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পারঙ্গম। সেই হেফাজত থেকে শুরু করে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গি হামলা বিরোধী অভিযান।
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বা র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি)। বরাবরই নিজের সামর্থ্যরে জানান দিয়েছেন তিনি। সব দায়িত্বেই সফল ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। ৩২ বছরের বর্ণাঢ্য চাকরিজীবনে পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ ‘আইজি’ পদেও নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন চৌকষ এ পুলিশ কর্মকর্তা।
একে একে ভারী করছেন অর্জন বা সফলতার পাল্লা। উজ্জ্বল ও প্রজ্ঞাময় চৈতন্যের প্রজ্জ্বলনে উদ্ভাসিত করেছেন নিজেকে। ভয়ঙ্কর অদৃশ্য জীবাণু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মূল্যবান প্রাণ সুরক্ষায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে তার নিজ বাহিনীর অকুতোভয় বীর সদস্যদের আত্মত্যাগ, মানবিকতার গল্প এখন সবার মুখে মুখে। যা অমর-অব্যয় হয়েই ঠাঁই নেবে ইতিহাসে।
পুলিশের নেতৃত্বে যোগ্য অভিভাবকের ভূমিকার কারণে যেমন আলোচিত হয়েছেন তেমনি সঙ্কটময় পরিস্থিতি পেশাদারিত্ব ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামাল দিতেও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ প্রধান হিসেবে প্রথম দুই মাসে তার ‘পারফরম্যান্স’ নজর কেড়েছে। গভীর আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ সময়ে পুলিশকে কোন রকম নেতিবাচক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি।
শক্ত হাতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা ছাড়াও পবিত্র মাহে রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ, ঈদকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারা, মানবপাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে নেটওয়ার্ক লন্ডভন্ড করে দেওয়া, পরিবহনে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে অসাধ্য সাধনের পদক্ষেপ, নিজ বাহিনীর অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাসহ ইত্যাকার বিষয়েই স্বকীয় সাফল্য দেখিয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ।
সূত্র মতে, পুলিশ প্রধান হিসেবে ড মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর স্বর্ণালী ও আলোকিত অধ্যায়ের সফল সমাপ্তির পর পুলিশের নতুন আইজি হিসেবে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ড.বেনজীর আহমেদ। এরপরই তাকে মুখোমুখি হতে হয় এক কঠিন পরীক্ষায়।
যদিও এ বিষয়ে বাহিনীর কারও পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা কিংবা প্রশিক্ষণ ছিল না। আর এভাবেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পাড়া করোনার বিভীষিকাময় দিনগুলোতে পুলিশ বাহিনীকে পরিচালিত করছেন দক্ষতার সঙ্গেই।
আর শপথ রক্ষায় অবিচল
দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা ‘জনবান্ধব’। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ফ্রন্টলাইনার হিসেবে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন, ত্রাণ বিতরণে সহায়তা, গানে গানে মানুষকে সচেতন, নিজেদের টাকায় অসহায়ের বাড়িতে খাবার-ওষুধ পৌছে দেওয়া, মৃত ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থাসহ ভিন্নধর্মী সব কাজই করেছেন তারা।
দুুর্দিনে পুলিশের আচরণ বারবার মনে করে দিয়েছে পুলিশ জনগণের বন্ধু। আইন প্রয়োগে কঠোরতার পাশাপাশি তাদের মানবিকতা রীতিমতো উদাহরণ তৈরি করেছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেও করোনা ঝুঁকির বাইরে নয় তারাও। একক পেশাজীবী বাহিনী হিসেবে পুলিশে করোনা আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ।
এখন পর্যন্ত ২১ পুলিশ সদস্য সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন বাহিনীটির প্রায় ৭ হাজার সদস্য। শোকবহ অবস্থার মধ্যেও জীবন ঝুঁকি উপেক্ষা করেই দায়িত্ব আর শপথ রক্ষায় অবিচল পুলিশ। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করেই মানুষকে নিরাপদ রাখছেন, সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
নিজ বাহিনীর সদস্যদের করোনা আক্রান্তের হার কমিয়ে দ্রুত সুস্থতার দিকেই গুরুত্ব দেন আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ। ইতোমধ্যেই পুলিশে ৩ হাজার ছাড়িয়েছে করোনা জয়ীর সংখ্যা।
আক্রান্ত সদস্যদের জন্য সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করাসহ সব পুলিশ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম সংযোজন করেছেন।
সঙ্কটময় মুহুর্তে নিজ বাহিনীর সদস্যদের পূর্ণ মনোবল ধরে রাখতেও নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন পুলিশ প্রধান। করোনা আক্রান্ত সদস্যদের দেখাশোনার জন্য গঠন করেছেন একটি ‘বিশেষ টিম’।
নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ইউনিট কমান্ডারদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন।
পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের শৈথিল্য না দেখানোর নির্দেশ দেন। সুরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কিনে বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।
করোনা মোকাবেলায় সাফল্য দেখিয়েছে এমন সব দেশের পলিসি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পলিসিসহ সরকারের নির্দেশনার আলোকে পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি আধুনিক স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসেডিওর (এসওপি) তৈরি করে সকল ইউনিটে পাঠিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
করোনায় আত্মোৎসর্গকারী ১৪ জন পুলিশ সদস্যের প্রত্যেক পরিবারের জন্য ওয়ালটন গ্রুপ থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এসব কারণেই মনোবল ধরে রেখে মাঠ পর্যায়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও দমে যায়নি পুলিশ।
আইজিপি করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের আনন্দ-বেদনার কথা শোনেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন।
রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ
গত রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। রমজানে ধর্মাচার বিষয়েও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেছে। পাশাপাশি পণ্যের কালোবাজারি রোধ এবং খাদ্যে ভেজাল দেওয়া বন্ধ করতে ওই সময় পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুলিশ।
বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়। গুরুত্বপুর্ণ ওই সময়েও নেতৃত্বে সপ্রতিভ ছিলেন পুলিশ প্রধান।
ঈদে স্বাভাবিক ছিল আইন-শৃঙ্খলা
পুলিশ প্রধান হিসেবে নিজের প্রথম ঈদে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছেন ড.বেনজীর আহমেদ। পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যরা পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় করোনায় প্রান্তিক মানুষজন কর্মহীন হয়ে পড়ল।
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো ডটকম।
Published by... Zime,Citizen Journalist, Satkhira.