ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে একটি মহল অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ বিষয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তা রোধে কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে বা সরকারের কার্যকরী কী পদক্ষেপ রয়েছে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এনটিএমসি (জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র) একটি বিভাগ রয়েছে, তারা সবসময় মনিটর করছে। কে করছে, কোথা থেকে আসছে- আমরা সেই জায়গাটিতে কাজ করছি। ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছি।
আমরা যে অভিযোগ করছি তারা সেগুলোর তথ্য আমাদের দিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা গতকাল যে প্রেস রিলিজটি দিয়েছি সেখানে বলা হয়েছে, সামাজিক অস্থিরতা বাড়ানোর জন্য অনেক সময় অনেক তথ্য এসেছে, যার সত্যতায় ঘাটতি রয়েছে।
আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন মিথ্যা খবর প্রচারিত হচ্ছে। পাশাপাশি আদালতের রায় নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন কায়দায় একটা অস্থিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই সমস্ত মিথ্যা অসত্য প্রচার করা হচ্ছে। জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ও আমাদের নিয়মিত বাহিনীগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য অসত্য তথ্য দিয়ে অন্য ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে এই কাজ করা হচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পিবিআই সুন্দর তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে বলে প্রতিশ্রতি দেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সিলেট ও নবাবগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সিলেটে পুলিশ ফাঁড়ির ঘটনার পর উপপরিদর্শক (এসআই) পলাতক রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটের ঘটনাটি তদন্তের মধ্যে রয়েছে, সেখানে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। কোতোয়ালি থানার কাস্টগড় এলাকা থেকে রায়হানকে ধরে আনা হয়েছিল। তিনি ৬টার দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল তাকে মৃত ঘোষণা করে। হাসপাতালে তার ময়না তদন্ত হচ্ছে কিংবা হবে। সে অনুযায়ী এবং নিহত যুবকের স্ত্রী যে মামলা করেছেন তার সবগুলি আমলে নিয়ে এটার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। তদন্ত অনুযায়ী যে দায়ী তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, পিবিআই-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে পিবিআই একটা সুন্দর তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পারে। আর নবাবগঞ্জের ঘটনাটা হলো হাজতখানায় একজন আসামি বাথরুমে গিয়ে নিজের লুঙ্গি দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এটাও আমরা ভালো করে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তের মাধ্যমে দেখব। হাজতখানার ভিতরে কীভাবে তিনি মারা গেলেন, সেটাও আমাদের দেখার বিষয়। কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন, তাকে কেউ প্ররোচনা দিয়েছিল কিনা, সব বিষয়ই আমরা দেখব।
নারী নির্যাতনের ঘটনায় বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ হয় না, এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবশেষ কেবিনেট বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নারী নির্যাতন আইনে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। নারী নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশের জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে, কয়েকটি ঘটনা সবার চোখে পড়েছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত এসেছে।
তিনি বলেন, বিচারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার সুষ্ঠু হওয়ার জন্য যা করা প্রয়োজন করছি। পুলিশি তদন্তসহ সব বিষয়ে নজর রাখছি। প্রয়োজনে পিবিআই-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত নিরপেক্ষ করতে যা দরকার করছি, করব। বিচার আমাদের হাতে নেই, আদালত বিচারের সিদ্ধান্ত নেবেন। তারাও দ্রুত বিচারের বিষয়টি বলেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসিড নিক্ষেপ নিয়মিত ঘটনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলো এবং তার কয়েকটি রায় কার্যকর হওয়ার পর এটি কমে গেছে। এখন নারী নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি করা হয়েছে। আমরা আশা করি এটিও কমে যাবে।