হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা উদযাপন হচ্ছে আজ। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এবার পূজা মণ্ডপ এবং বিভিন্ন মন্দিরে স্বল্প পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল হতে উপবাস থেকে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তরা প্রার্থনা জানাচ্ছেন বিদ্যার দেবীর। বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভক্তি জানাচ্ছেন তারা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। ধর্মীয় বিধান অনুসারে সাদা রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও সুরের দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন। সরস্বতী নদীর তীরে দেবীর স্তোত্র ও আরাধনার মাধ্যমে বেদধ্বনি হতো বলে এই নদী বাগদেবীর বাসস্থান বলে অভিহিত। নদী অর্থে তিনি পবিত্র তোয়া সঙ্গীতময় ও সুন্দর স্তোত্রের উদ্বোধনকারী। বাগদেবী অর্থে তিনি মানব হৃদয়কে পবিত্র করেন। তিনি সুন্দর ও মর্ত্যবাক্যের প্রেরণকাত্রী। তিনি মহাসমুদ্রের মতো পরমাত্মার প্রকাশ করেন। তিনি সমুদয় মানব-মানবীর হৃদয়ে জ্যোতি সঞ্চারিত করেন। পরমাত্মার মুখ থেকে তার আবির্ভাব।
এদিকে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনা পরিস্থিতিতে এবার সরস্বতী পূজার আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ অংশ না নিলেও শুধু জগন্নাথ হল সংক্ষিপ্তভাবে পূজার আয়োজন করেছে।
জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা প্রতিবেদক কে বলেন, 'করোনা পরিস্থিতির জন্য এবারে সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠান খুবই সংক্ষিপ্তভাবে হচ্ছে। অন্যান্য বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ অংশগ্রহণ করতো। কিন্তু এবার শুধু জগন্নাথ হলে এ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠান সকাল ৯ টা থেকে বিকেল এর মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।'
করোনাকালে সরস্বতী পূজার আয়োজন হচ্ছে সীমিত পরিসরে ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পূজার আনুষ্ঠানিকতার বাইরে অন্য কোনও আড়ম্বরতা থাকছে না। মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি ও ধর্মীয় আলোচনা সভা কিংবা জনসমাগম হয় এমন আয়োজন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপেও একই ধরনের অনুষ্ঠানমালা থাকছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পূজা হচ্ছে না।
জাতীয় সংসদের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউর রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরস্বতীয় পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া রাজধানীর রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসকন মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা), ব্যাংকার্স পূজা পরিষদ, রামসীতা মন্দিরসহ বিভিন্ন সংগঠন সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে।