ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল আজহা। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ এবং প্রতিবছর এ দেশে ঈদুল আজহায় ত্যাগের মহিমায় লাখ লাখ পশু তথা গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কোরবানি করা হয়। ইসলাম ধর্মের বিধান মোতাবেক, কোরবানিকৃত এসব পশুর চামড়ার টাকা গরিব, এতিম, অসহায়, দুস্থ কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য।
সহজভাবে বলতে গেলে কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা গরিবের হক। অথচ কয়েক বছর ধরে এ দেশে কোরবানির সময় পশুর চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হওয়ায় গরিব-দুঃখী, অসহায় ও দুস্থরা তাদের প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা দুঃখজনক। অনেক সময় সরকার নির্ধারিত দামও পাওয়া যায়না সিন্ডিকেটের কারনে।
এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তাই ঈদের আগেই কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেছেন, পশুর চামড়ার বাজার ধস নামাতে একটি মুনাফালোভী চক্র বা সিন্ডিকেট কারসাজি করার প্রচেষ্টা করে। তাদের বিরুদ্ধে র্যাবের কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। দেশের চামড়া যাতে ট্যানারিমুখী হয়, এবিষয়ে র্যাবের নজরদারি থাকবে। পশুর চামড়া নিয়ে কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার (১৮ জুলাই) পূর্বাচলে কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও গৃহীত নিরাপত্তা পরিদর্শনে এসে র্যাব মহাপরিচালক এই হুঁশিয়ারি দেন
এ সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্) কর্নেল কে এম আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ ও র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা ঈদ এলে মার্কেট, সাধারণ মানুষের ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা ও কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধসহ বিভিন্ন বিষয় দেখতাম। কিন্তু এবার ভিন্নমাত্রায় আমরা ঈদ উপযাপন করতে যাচ্ছি। পশুর হাটে আগতদের অনুরোধ করব, আপনারা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন। বাজারে পশুর বেচাকেনা শুরু হয়েছে এবং পর্যাপ্ত পশু বাজারে আছে। আপনারা মাস্ক ব্যবহার করুন, সবার সঙ্গে স্যানিটাইজার রাখুন। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু কেনাকাটা করুন। সবার সচেতনার মাধ্যমেই আমরা করোনাকে জয় করব ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, ঈদ এলেই গরুর হাটে জাল টাকার ছড়াছড়ি হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখি, জাল টাকা দিয়ে একশ্রেণির প্রতারক চক্র মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করে থাকে। সে জন্য আমরা জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন রেখেছি। অন্য ব্যাংকগুলোও জাল টাকা শনাক্তে মেশিন দিয়ে বুথ স্থাপন করেছে। কারও কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে র্যাবের সহযোগিতা নিন।
‘ইতিমধ্যে আমাদের অভিযানে বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, চট্টগ্রাম ও নাটোর থেকে প্রচুর জাল টাকা উদ্ধার হয়েছে। এটা সবাইকে প্যানিক করা জন্য বলছি না, টাকা-পয়সা লেনদেন করার সময় সবাইকে সচেতন হতে বলছি; বলেন র্যাব প্রধান।
অপরাধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেখানে মানুষের জনসমাগম হয় বা মুভমেন্ট বেড়ে যায়; সেসব ক্ষেত্রে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি বা অপরাধ চক্র অপরাধ করার চেষ্টা চালায়। এসব অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তারও করেছি। অপরাধীদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যারা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে বা যারা অপরাধে সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
https://youtu.be/_slUIFKq6SY
র্যাব ডিজি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করছি। যাতে ঢাকামুখী পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি কেউ করতে না পারে। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে যেখানেই আমরা তথ্য পাচ্ছি সেখানেই আমরা দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
পশু কেনাকাটায় ভার্চুয়াল জগত র্যাবের নজরদারিতে রয়েছে জানিয়ে র্যাবের প্রধান বলেন, ‘অনলাইনে এবার পশু কেনাবেচা হচ্ছে। আমরা ভার্চুয়াল জগতে পেট্রোলিং করছি। সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় এজন্য আমাদের কার্যক্রম অব্যাহৃত আছে। তারপরও কেউ যদি কোনো প্রতারক চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হন, আমাদের জানান; আমাদের সহায়ত গ্রহণ করুন।’
পশুর চামড়া নিয়ে যারা সিন্ডিকেট করবে তাদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে র্যাব ডিজি বলেন, ‘পশুর চামড়ার বাজার ধস নামাতে একটি মুনাফা লোভী চক্র বা সিন্ডিকেট কারসাজি করার প্রচেষ্টা করে। তাদের বিরুদ্ধে র্যাবের কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। দেশের চামড়া যাতে ট্যানারিমুখী হয় এবিষয়ে আমাদের নজরদারি থাকবে।’
যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে র্যাব তৎপর থাকবে জানিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঈদের মাঠে, ঈদের পূর্বে কোনো রকম দাঙা-হাঙামা বা খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি না এজন্য ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যেন আমরা অটুট থাকি।’
র্যাবের হটলাইন নম্বর: যেকোনো ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য র্যাব হটলাইন নাম্বার চালু করেছে। সেগুলো হলো- ০২৫৫৬৬৯৯৯৯ ও ০১৭৭৭৭২০০২৯।
সংবাদ কালের আলোর।