দেশের জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দেশমাতৃকার জন্য মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য বিগত ২০২২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের ১২১ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আত্মোৎসর্গকারী এসকল পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পালিত হয়েছে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৩’।
দেশব্যাপী সকল পুলিশ ইউনিটে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের পাশাপাশি ঢাকার মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হয়।
বুধবার (১ মার্চ ২০২৩ খ্রি.) ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষে সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর পুলিশ মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদেরকে। দৃষ্টিনন্দন পুলিশ মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম এর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করেন।
আত্মোৎসর্গকারী এ সকল পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ১০ পুলিশ সদস্যের পরিবারের হাতে সম্মাননা, আর্থিক অনুদান, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি।
পুলিশ কনভেনশন হলে এক আলোচনা সভার শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এসময় দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া সকল বীরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস বাঙালির মাস। এ মাস মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মাস। এ মাস আমাদের মনে করে দেয় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের কথা, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কথা, ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতার কথা।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যগণ সব সময় দেশের জন্য কাজ করেন। সেজন্য জীবন গেলেও তারা কর্তব্যের কথা ভোলেন না। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা পুলিশ বাহিনীর অন্যতম কাজ এবং দায়িত্ব। দেশ সেবার ব্রতে দীক্ষিত হয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণ এ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করছেন। সম্প্রীতি করোনাকালীন সময়েও আত্মত্যাগ, কর্তব্যবোধ, দেশের প্রতি ও দেশের মানুষের প্রতি যে মমত্ববোধ সেটা তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জনে পুলিশের সকল সদস্যকে সততা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা গর্ব করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু যে পুলিশ চেয়েছিলেন, আজকে সেই পুলিশ জনগণের পুলিশ হয়েছে। বর্তমান সরকার সর্বদাই এই বাহিনীর উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি বর্তমান সরকারের সময় পুলিশের জন্য গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরেন।
দেশের জন্মলগ্ন থেকে স্বাধীনতার চেতনা যে বাহিনী হৃদয়ে লালন করে, সে পুলিশ গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় সহযাত্রী হয়ে জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণে সুখী সমৃদ্ধ ও নিরাপদ দেশ গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যগণের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০২২ সালে ১২১ জন বীর পুলিশ সদস্য জীবন উৎস্বর্গ করেছেন। যতই বাধা আসুক না কেন দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে আপনাদের কাজ করে যেতে হবে। অগ্নিঝরা মার্চের স্বাধীনতার প্রথম দিবসে এমন একটি দিনে এ আয়োজন করার জন্য তিনি বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ শতবর্ষের পুরানো একটা প্রতিষ্ঠান। দেশের সেবায়, মানুষের সেবায়, সরকারের নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সবসময় পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এদেশের মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের প্রতিটি সদস্য তাদের নিজে দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পেশাদারীত্বের সাথে পালন করছে। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত বছর ১২১ জন সদস্যকে আমরা হারিয়েছি।
তিনি বলেন, অন্য সংস্থার সদস্যরা কাজে যান, আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। কিন্তু পুলিশের কোন কর্ম ঘন্টা নেই, তারা ফিরে আসবে কিনা সে নিশ্চয়তা নেই। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের উজ্জীবিত করে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে আরো শানিত করে। এ সময় তিনি জীবন উৎসর্গকারী এসব পুলিশ সদস্যের পরিবারে যেকোন প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বস্থ করেন। পরবর্তীতে তিনি এসব পরিবারের স্ত্রী, সন্তান ও পিতা-মাতার খোঁজ খবর নেন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) মোঃ মাজহারুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যে আলোচনা সভায় পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১লা মার্চ পালন করা হয় ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’।