আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজের আসন লালমনিরহাট সদর আসনের পরিবর্তে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন রওশনপুত্র সাদ এরশাদের রংপুর সদর আসনের। তার স্ত্রী শেরিফা কাদের ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
এদিকে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত, সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) নির্বাচনী এলাকা থেকে জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আংশিক) আসন থেকে ফরম কিনেছেন কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীন। জেলা জাতীয় পাটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা-আশাশুনি ও কালিগঞ্জের আংশিক) আসন থেকে এড. আব্দুল আলিম ছাড়াও আরও একাধিক প্রার্থী জেলার ৪টি আসন থেকে ফরম সংগ্রহ করবেন বলে ঢাকায় এসেছেন।
এছাড়া দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরো রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ সিনিয়র নেতারাও দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সকাল ১১টার দিকে বাবলার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-৪ আসন থেকে সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে বনানীর জাপা চেয়ারম্যাসের কার্যালয়ের সামনে আসলে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেলা ২টা পযর্ন্ত বাবলার সমর্থকরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে পুরো এলাকা। বাবলার পক্ষে মনোনয়ন কিনেন তার স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সালমা হোসেন। অন্যান্য প্রার্থী স্বল্পসংখ্যক কর্মী সমর্থক নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন।
জাপার দপ্তর জানায়, সোমবার পাঁচ শতাধিক মনোনয়ন পত্র বিক্রি হয়েছে। তবে, জাপার বনানী কার্যালয়ে একটি সূত্র জানায়, প্রথমদিনে শতাধিক ফরম বিক্রি হয়েছে।
এদিকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টি নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখছি। সময়ের বাধ্যবাধকতা আছে, তাই নির্বাচনি কার্যক্রম এগিয়ে রাখছি। দলের চেয়ারম্যান ৩০ নভেম্বরের আগে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
তবে দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার পরে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। মানুষের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে নির্বাচনে যাচ্ছি। দেশে যেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের অগ্রগতি, দেশের স্বার্থ। বিদেশিরা এসে প্রেসক্রিপশন কেন দেবেন? আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
আরেক কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমি সারা বছরই দলীয় সাংগঠনিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি নির্বাচন কেন্দ্রীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকি। তারই অংশ হিসেবে দলের নির্দেশনায় আমার নির্বাচনি এলাকার ঢাকা-৪ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছি। নির্বাচনের জন্য আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। দল যে নির্দেশনা দেবে সেটা মেনে কাজ করবো। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমি মনে করি।
জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য বিভাগ অনুযায়ী আটটি বুথ করা হয়েছে। প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা। ২৪ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন দুটি বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ২৪ নভেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, ২৫ নভেম্বর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ, ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত শনিবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আলাদা দুটি চিঠি যায়। একটি পাঠান দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। অন্যটি পাঠান দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক। রওশন এরশাদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- সংবাদ পত্রদূত নেট।