অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়ায় আখড়াবাড়িতে আয়োজিত তিন দিনের লালন তিরোধান শেষ হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতভর গানে গানে শেষ হয় লালন ভক্ত, সাধু গুরুদের এ মিলনমেলা। সাঁইজির প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভাব আদান-প্রদান শেষে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যেতে শুরু করেছেন তারা। প্রথমবার জাতীয়ভাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় গত শুক্রবার সন্ধায় উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারকী। জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক পিপিএম।
![]()
বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবপ্রসাদ পাল। মূখ্য আলোচক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর প্রফেসর ড. মো. খালেকুজ্জামান।
গতকাল রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে যেন বাজছে বিষাদের সুর। তিন দিন বিপুল লোক সমাগমের পর কমতে শুরু করেছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসবে ভক্তদের আনাগোনা। তারপরও কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল লালনের গান। বাউল সাধুরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে গান পরিবেশন করছেন। অনুষ্ঠানের মুক্তমঞ্চেও চলছে গান। মঞ্চের সামনেই বসেছে গ্রামীণ মেলা। ফকির হৃদয় সাঁই বলেন, এখানে অষ্টপ্রহর ভক্তরা প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা ও ভাব বিনিময় করে নিজ গন্তব্যে চলে যান। বিদায় খুব কঠিন ব্যাপার। তাই বিদায়বেলা খুব কষ্টের। কথা হয় মেহেরপুর থেকে আসা লালনভক্ত ইমতিয়াজ জোয়ার্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, কার্তিকের পহেলা দিন ভুলে থাকা যায় না। যেখানেই থাকি, মন ছুটে আসে। কোনো বাধা মানে না। সাঁইজির চরণে আশ্রয় নিতে আমাদের আসা। ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক কালজয়ী ভাবুক ও শিল্পী ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে প্রয়াত হন। এর পর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। পরে লালন একাডেমি এ আয়োজনের দায়িত্ব নিলেও এবার প্রথমবার জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় এ দিবসটি।