প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক গ্রহণ করলেন হাবিবুর রহমান

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 175 দর্শন

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মাতৃভাষা সুরক্ষা, উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদকে ভূষিত হলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার।

৫১ কোটি এক লাখ ৫০০ বর্গকিলোমিটারের এই বিশ্বে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭৮৮ কোটি ৮০ লাখ, যাদের ভাষার সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ১০০। এর মধ্যে মাত্র ১২টি ভাষায় কথা বলে ৪৮৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫০ ভাগ মানুষ কথা বলে মাত্র ২৩টি ভাষায়। ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে প্রতি ১৪দিনে একটি করে ভাষা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে যার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের ৪০ভাগ অর্থাৎ ২ হাজার ৮ শত ৪০টি ভাষা-ভাষির মানুষের সংখ্যা গড়ে ১ হাজার জনেরও নিচে নেমে আসার কারণে ভাষাগুলো আজ বিলুপ্তির পথে।

প্রতিটি জাতির মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক পরিচর্যা এবং তার যথাযথ সংরক্ষণ ও অনুশীলন ব্যবস্থা একটি দেশ ও জাতীয়তাবোধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এর বড় প্রমাণ বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ। ১৯৫২ এর বাংলা ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তির সংগ্রামের মাধ্যমে আজকের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় হয়েছে।

এই ছোট্ট বাংলাদেশেও রয়েছে বাংলা ভাষার বাইরে আরো ৪০টি ভাষা যেগুলোর অনেকটাই এখন বিলীন হওয়ার পথে। বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া বেদে জনগোষ্ঠীর লিপিহীন “ঠার” ভাষাটিও প্রায় বিলীন হতে চলেছিল। যে ভাষাটি ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। তিনি নিয়মিত পুলিশি পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি দীর্ঘ ৮ বছর নিরন্তর গবেষণাপূর্বক পিছিয়ে পড়া বেদে জনগোষ্ঠীদের বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষা “ঠার” সংগ্রহপূর্বক সেটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষাগ্রন্থাকারে প্রকাশ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে অদ্য ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট আয়োজিত ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক মাতৃভাষা সুরক্ষা, উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদকে ভূষিত হলেন।

এই পুরস্কার গ্রহণ করে ‘ঠার’ ভাষাগ্রন্থের লেখক হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে পুরস্কার প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট, নির্বাচক মন্ডলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এবং দেশের সব মিডিয়া ও সহকর্মীবৃন্দসহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন হাবিবুর রহমান।

এমন বিরল কাজটি কিভাবে সম্পন্ন করেন এ প্রসঙ্গে “ঠার” ভাষাগ্রন্থের লেখক হাবিবুর রহমান বলেন- বাস্তবে আমরা যদি এই বইটির কথা বলি, এই বইটি একটি গবেষণাধর্মী বই। আমাকে যদি বলা হয় যে, আমি কি গবেষক? তাহলে আমি উত্তরে বলবো যে অবশ্যই না, আমি কোনো পেশাদার গবেষক নই, আমি কোনো পেশাদার লেখকও নই, আমি মূলত: একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আমার পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বেদে সমাজের সঙ্গে আমার পরিচয়!

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশিত “ঠার” ভাষাগ্রন্থটি রচনা প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এর কারণ হলো আমরা জানতাম, বুঝতাম, আমাদের একজন শেখ মুজিব ছিল, আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু ছিল, যারজন্য বাঙালি ভাষার জন্য লড়াই করেছে, বাংলা ভাষাকে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে। ওরা (বেদেরা) নিজেরাই বোঝে না যে তাদের একটা ভাষা এবং এটি তাদের সংরক্ষণ করা দরকার। কারণ ওদের নিজস্ব কোনো শিক্ষিত লোক নেই, এ ভাষায় কোনো লিপি নেই।

হাবিবুর রহমান বলেন বলেন, বেদে জনগোষ্ঠী আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। তাদের নিয়ে অসংখ্য সিনেমা নাটক তৈরি হয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমাটিও তাদের জীবনধারা নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। বেদেরা বিভিন্নভাবে আমাদেরই শুধু রিক্রেয়েশন দিয়ে যাচ্ছে অথচ তাদের জীবনে নিজস্ব কোন রিক্রেয়েশনের সুযোগ নেই। এই ভাবনাটাও আমাকে সবসময় তাড়িত করে আসছে।

বেদে জনগোষ্ঠীর নিষ্পেশিত ও যাপিত জীবনের কথা বলতে গিয়ে হাবিবুর রহমান জানান, ঢাকা জেলার এসপি থাকাকালীন পেশাগত কারণে বেদে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তাদের সাথে প্রথম মিটিংয়ের সময় লক্ষ করলাম সকলেই চেয়ার ছেড়ে ফ্লোরে বসেছেন। আমি তাদেরকে বললাম – আপনারাতো আমার অতিথি, আপনারা ফ্লোরে বসেছেন কেনো, আপনারাতো চেয়ারে বসবেন। পরে সকলে উঠে চেয়ারে বসলেন- এটাই ছিল তাদের প্রথম চেয়ারে বসা!

উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান পাঞ্জেরী-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ এ ভূষিত হয়েছেন!





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন