বিরক্ত না হয়ে হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সাতক্ষীরার এসপি কাজী মনিরুজ্জামান

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 11637 দর্শন

 

কোন রকম বিরক্ত বোধ না করে হাসিমুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম।গতবছর আগষ্ট মাসের ২৩ তারিখে তিনি সাতক্ষীরা জেলা তে যোগদান করেন। যোগদানের এক বছরের ভিতরে তিনি সাতক্ষীরা জেলার চিত্র পাল্টে দিয়েছেন।জেলার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যেকোন সময়ের চাইতে অনেক ভালো।নেই কোন চোর ডাকাতের উৎপাত। কোন রকম রক্তপাত ছাড়াই পুলিশ সুপার তাঁর দুরদর্শিতা দিয়ে অশান্ত সাতক্ষীরা কে শান্ত করে রেখেছেন।আইন-শৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি পুলিশ সুপার প্রতিদিন তাঁর অফিসে অর্ধশতাধিক অসহায় ও নিরিহ মানুষ কে পুলিশি  সেবা দিয়ে থাকেন।

সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ সুপারের কক্ষের সামনে ওয়েটিং রুমে প্রতিদিন ই নাম লিখিয়ে বসে থাকেন  ১০-১২ জন নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ।তাদের ভিতরে বৃদ্ধ দম্পতী প্রথমে প্রবেশ করলেন পুলিশ সুপারের কক্ষে।এসময় কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশ সুপারের কক্ষে বসে বিষয়টি অনুধাবন করছিলেন।

পুলিশ সুপার বল্লেন কি সমস্যা আপনাদের? তারা উত্তরে বল্লেন, স্যার আপনার ওমুক থানার ওমুক দারোগা আমাদের বিবাদী পক্ষের সেল্টার দিয়ে জমির প্রাচীর দিতে দিচ্ছেনা। সাথে সাথে তাদের সামনে পুলিশ সুপার লাউন্ড স্পিকারে ফোন দিলেন সেই থানার ওসির নিকট। বল্লেন, ওসি সাহেব দেখেন তো আপনার ওমুক দারোগা এদের ঝামেলা করছে কেনো?এরা অসহায় মানুষ জমির কাগজ পত্র ঠিক আছে এরা যাচ্ছে আপনার থানায়, ন্যায় বিচার করে দিয়েন।পুলিশ সুপার এত কিছু ওসি কে বলার পরেও বৃদ্ধ মহিলা পুলিশ সুপার কে বলছে স্যার,আপনি দারোগা বাবু কে বলে দেন।নাই দারোগা বাবু কথা শুনবেনা।

একথা শুনে  পুলিশ সুপার হেঁসে ফেল্লেন আর বল্লেন,আপনি যান দারোগা বাবু অবশ্যই ওসি সাহেবের কথা শুনবেন। যদি না শোনে তবে আমার ভিজিটিং কার্ড নিয়ে যান। আবার আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন।এই বৃদ্ধ দম্পতী কে আবার ড্রাগণ ফল আর কফি খাওয়ায়ে আপ্যায়ন করলেন পুলিশ সুপার।দুই দম্পতী র পিছনে পুলিশ সুপারের সময় নস্ট হলো প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি।

একই ভাবে এক হিন্দু ভদ্রমহিলা আসলেন পুলিশ সুপারের কক্ষে। তার অভিযোগ তাদের পরিবার কে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষ হয়রানী করছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট থানার ওসি কে ফোন দিলেন এবং হিন্দু মহিলার নাম বলে দিলেন ওসি সাহেব কে।বিষয়টি সঠিক ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বল্লেন পুলিশ সুপার।পুলিশ সুপারের কথায় খুব একটা খুশি হতে পারলেন না ঐ হিন্দু মহিলা।

তিনি একটু এসপি সাহের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বল্লেন, স্যার কডা টাকা দেই ঐ ফাড়ির ইনচার্জ কে আপনি বলে দেন। পুলিশ সুপার তখন একটু রাগ করে বল্লেন, খবদ্দার!! চা-রানা পয়সা দিবেন না আমার দারোগা কে।আমি জানতে পারলে কিন্তু তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে রাখবো। একই ভাবে হিন্দু মহিলা কে ড্রাগণ ফল আর কফি খাওয়ায়ে আপ্যায়ন করলেন পুলিশ সুপার।

এখানেও বেশ ৩০-৪০ মিনিট কথা বলতে হলো পুলিশ সুপার কে।দুটো অভিযোগ নিষ্পত্তির পর পুলিশ সুপার এবার স্টোনোর আনা বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ করতে থাকলেন।

দাপ্তরিক কাজ শেষে আবারো এক মহিলা আসেন পুলিশ সুপারের কক্ষে।তার অভিযোগ তার স্বামী বাচ্চা রেখে চলে গেছে অন্য মহিলার সাথে। বাচ্চার ভরণপোষণ দেন না স্বামী। পুলিশ সুপার সাথে সাথে ওসি ডিবি কে ফোন করে লিখিত অভিযোগ নিয়ে তার স্বামী কে ডেকে আনতে বলেন।পুলিশ সুপারের তড়িৎ পদক্ষেপ দেখে অশ্রুশিক্ত চোখে ঐ মহিলা এসে পুলিশ সুপারের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে পুলিশ সুপারের জন্য দোয়া করে দেন।

তার কিছুক্ষণ পরে এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধ দম্পতী আসেন পুলিশ সুপারের কক্ষে। তাদের অভিযোগ পুত্রবধূর কথা শুনে ছেলে পিতা-মাতার প্রতি অত্যাচার করেন।একই ভাবে পুলিশ সুপার ওসি ডিবি কে ফোন করে তাদের কে  সহযোগীতা করার নির্দেশ প্রদান করেন।

পুলিশ সুপারের এসব মানবিক ঘটনা সাতক্ষীরা জেলার প্রথিতযশা সাংবাদিক গণ জানেন। কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশ সুপার কে অনুরোধ করে বলেন, আপনি তো প্রতি বুধবার বা বৃহম্পতিবার ডিসি অফিসের গণশুনানির মত করলে পারেন।

পুলিশ সুপার উত্তরে সাংবাদিক দের বলেন ,আমার কাছে দুর দুরান্ত অনেক বৃদ্ধ মানুষ কষ্ট করে আসে।আমি তাদের কি করে ফিরিয়ে দেবো? আমার বিবেকে বাধা দেয়। এই অসহায় মানুষ গুলো থানায় বিচার না পেয়ে দুর দুরান্ত থেকে অনেক আসা নিয়ে আসে আমার দপ্তরে। আমি যদি বিরক্ত বোধ করি, তাহলে তারা যাবে কোথায়?

পুলিশ সুপারের কথা  শুনে  বোঝা গেলো তিনি সত্যি সত্যি শতভাগ আন্তরিকতার সহিত তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগেই তিনি এসব মানবিক কাজ গুলো করেন।

আর এসব দক্ষতার  কারনে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম খুলনা রেঞ্জ পুলিশের কনফারেন্স মিটিংয়ে জুন/২৩ ও জুলাই/২৩ মাসে খুলনা রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসাবে সন্মানা ক্রেস্ট অর্জন করেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির নিকট থেকে। এর আগে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সুপার পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পিপিএম পদক গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশ সুপার কে বলেন, আপনি জেলার ৮ টি থানা তদারকি করেন ,জেলা গোয়েন্দা শাখা,  জেলা বিশেষ শাখা ও জেলা ট্রাফিক বিভাগ তদারকি করেন।যেটা করতে সারাদিন-রাত আপনার ব্যস্ততার ভিতরে সময় পার করতে হয়।এমনি কি আপনার সরকারি ফোনটি আপনি বন্ধ করে ঘুমাতে পারেন না

আপনি শত ব্যস্ততার ভিতরেও এই যে দুর-দুরন্ত থেকে আসা অসহায় মানুষ গুলোর সাথে হাসি মুখে কথা বলেন ও তাদের আপ্যায়ন করেন সত্যিই আপনি অতুলনীয় ও অসাধারণ পুলিশ সুপার। আপনি পারেন ও বটে। আপনার এই ধৈয্য সত্যিই প্রশাংসার দাবীদার। আপনাকে হৃদয় থেকে স্যালুট পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক,আপডেট সাতক্ষীরা।

 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন