অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দরবনকে ঘিরে র্যাবের শ্বাসরুদ্ধকর অপারেশন নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা। ২০ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
সভাপতিত্ব করেন র্যাব মহাপরিচালক (অতিরিক্ত আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম (বার), পিপিএম।
উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, সুন্দরবন আমাদের কাছে অন্যরকম এক অনুভূতি। এই সুন্দরবন যেমন সুন্দর, তেমনি ভয়ঙ্কর। একটা সময় ছিল যখন দস্যুদের কারণে সুন্দরবন আরও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন বলেই সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। তাঁর নির্দেশনায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে র্যাবের অভিযানে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। সেই সকল অভিযান নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা। এ সিনেমার মাধ্যমে দর্শকরা র্যাবের অভিযান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবে। এমন একটি কাজ করার জন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আইজিপি বলেন, অপারেশন সুন্দরবন কোন ক্রিয়েটিভ গল্পের মুভি নয়, একেবারে জীবন থেকে নেয়া। র্যাব ফোর্সের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে কিভাবে দেশের জন্য কাজ করছেন তার একটা ডকুমেন্টেশন এ মুভির মাধ্যমে আমরা দেখতে পাবো। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের যে ঐতিহ্য রয়েছে তা দেখতে পাবো। সুন্দরবন বাংলাদেশের ঐতিহ্য, ইউনেস্কোর ঐতিহ্য, সুন্দরবন আমাদের গর্বের জায়গা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে যে বন আমাদের বাঁচিয়ে রাখে তার রূপ মাধুর্য দেখতে পাবেন। সে সঙ্গে জলদস্যুরা প্রায় চারশ বছর ধরে এখানে অ্যাকটিভ ছিল। ২৫ লাখ মানুষ সরাসরি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। তারা বত্রিশটি গ্যাং দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে। অত্যাচারিত বললে এর নির্মমতা বোঝানো যাবে না। এখানে অনেক ভয়াবহতা ছিল, নির্মমতা ছিল। এখন সুন্দরবন নিরাপদ। গত চার বছর ধরে এ বন নিরাপদ রয়েছে।
আইজিপি বলেন, করোনা না হলে সিনেমাটি আরও আগে মুক্তি পেত। সিনেমাটি যেন আলোচনায় থাকে সেজন্য র্যাব অনেক কাজ করেছে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যখন অনুরোধ করি যে, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোঘণা করেন, তখন অনেকে বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও যদি দস্যু বের হয় তাহলে কেমন হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে, তিনি আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন, বিশ্বাস রেখেছিলেন।
র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম, পিপিএম বলেন, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে মাইলফলক হয়ে থাকবে। সুন্দরবনের অনন্য সৌন্দর্য বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে এ চলচ্চিত্র। র্যাব ফোর্সের দুঃসাহসিক অভিযানকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।
তিনি বলেন, সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। অথচ কিছু দিন পূর্বেও বনজীবী ও মৎস্যজীবীরা বনদস্যু ও জলদস্যুদের কাছে জিম্মি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় র্যাব ফোর্সের সাড়াশী অভিযানের ফলে এই অরাজক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটেছে। র্যাব এর অভিযানের ফলে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। র্যাব কর্তৃক সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করে। সুন্দরবনে অপহরণ, হত্যা এখন নির্মূল হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলেদের কাষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও এখন কাউকে দিতে হচ্ছে না। মৌয়ালী, বনজীবী, মৎস্যজীবী সবাই এখন নিরাপদ। দর্শনার্থী ও পর্যটকরাও এখন নিরাপদে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারছে। এখন এ অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বইছে ।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে দর্শকদের জন্য বিভিন্ন হলে মুক্তি পাবে। দেশি-বিদেশী অনেক কলাকুশলীর সমন্বয়ে সিনেমাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিনেমাটির টিজার, অফিসিয়াল পোস্টার ও দুটি গান রিলিজ হয়েছে, যা দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া চলচ্চিত্রটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
তরুণ নির্মাতা দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন নুসরাত ফারিয়া, রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, দর্শনা বণিক, সামিনা বাশার, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামানিক, দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান প্রমুখ।
‘অপারেশন সুন্দরবন’ আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে।