এসএম শহীদুল ইসলাম: ইভিএম পদ্ধতিতে ৫টি ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে এনআইডি কার্ড, এসডি কার্ড, অডিট কার্ড ও পোলিং কার্ড। ইভিএম পদ্ধতিতে দুটি ইউনিট থাকে। একটি কন্ট্রোল ইউনিট, অপরটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটে আগে থেকেই সংযুক্ত থাকে এসডি কার্ড। এরপর ভোট কেন্দ্রে এজেন্টের সামনেই ইনস্টল করা হয় অডিট কার্ড। এসডি কার্ডে এনআইডি নাম্বার, প্রার্থীর নাম ও প্রতীক, ভোট কেন্দ্র নাম্বার এবং ব্যুথ নাম্বার ইত্যাদি তথ্য থাকে। এসডি কার্ডে থাকে কেন্দ্রের সকল ভোটারের তথ্য। নির্বাচনের সময় এটি সিলগালা করা থাকে। অডিট কার্ডে থাকে কেন্দ্রের নাম ও কক্ষ নাম্বার। এতে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসওয়ার্ড থাকে। প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকে পাসওয়ার্ড। একটি কেন্দ্রে ১০টি ব্যুথ থাকলে পোলিং কার্ড থাকবে ১০টি। অর্থাৎ প্রতি ব্যুথের জন্য একটি করে পোলিং কার্ড থাকবে। প্রত্যেক ব্যুথের ভোটারদের তথ্য পোলিং কার্ডে থাকবে। কেউ চাইলেও অন্য ব্যুথে যেয়ে ভোট দিতে পাবে না। ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার সাথে সাথে ভোটারের ছবি ও ভোটার নাম্বার স্ক্রীনে ভেসে উঠবে। যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃত ভোটার কীনা। ভোটার নিশ্চিত হবার পর তিনি গোপন কক্ষে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নামের পাশে প্রতীক দেখে সুইচ টিপে ভোট দিতে পারবেন। কোন কারণে ভোটার ভুল করে অন্য প্রার্থীর প্রতীকে সুইচ চাপলে লাল সুইচ চেপে পুনরায় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সবুজ সুইচ চেপে ভোটার তার ভোট নিশ্চিত করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে, ভোটার কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছে তা কেউ দেখতে পেলো কীনা, অথবা এটি সংশ্লিষ্ট মেশিনে সংরক্ষিত হলো কীনা। পরবর্তীতে যিনি বিজয়ী হলেন তিনি আবার এটি ব্যবহার করে জানতে পারবেন কীনা যে, কে তাকে ভোট দিয়েছে এবং কে তাকে ভোট দেয়নি। এসব প্রশ্নের উত্তরে এক কথায় বলা যায়, এসবের কোন তথ্যই কেউ জানতে পারবে না। জানার কোন সুযোগও নেই। ভোটার সুইচ চাপার সাথে সাথেই ভোটটি চলে যাবে তার পছন্দের প্রার্থীর তালিকায়। ভোট গ্রহণের পূর্বে জিরো জিরো লেখা সম্বলিত কাগজ প্রিন্ট হবে। এটি দেখেই প্রার্থীর এজন্টরা সহি করবেন। ভোট গ্রহণের সময় বিদ্যুতের দরকার হবেনা। কারণ ইভিএম চলবে ব্যাটারিতে। ইভিএম কোন অনলাইনের সাথে যুক্ত নয়, এটি অফ লাইন। তাই হ্যাকিংয়ের কোন আশঙ্কা নেই। একজন ভোটার একবারের বেশি ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে না। তাই জাল ভোটেরও কোন চান্স নেই। ইভিএম পদ্ধতিতে কারও ভোট বাতিল হবার সুযোগ নেই। ভোটারের ভোটটি তার কাক্সিক্ষত প্রার্থীর অনকূলে গেছে কিনা তাও তিনি নিশ্চিত হতে পারবেন। ভোট শেষে খুব অল্প সময়েই গণনা শেষ হবে। ফলাফল পেতেও কোনো বেগ পেতে হবে না।
বুধবার বিকেলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদানের ওপর ধারণা দিতে গিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এসএম মোস্তফা কামাল এই তথ্য গুলি তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি বলেন, কোনো সংশয় সন্দেহ কিংবা অনিশ্চয়তা নেই, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দেবেন। এ জন্য ভোট কেন্দ্রে যেমন কোনো ব্যালট বাক্স লাগবে না, তেমনি ব্যালট পেপারও লাগছে না। সাধারণ ভোটারদের এ বিষয়ে অবহিত করতে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় প্রাকটিক্যাল প্রচারণা চালানো হবে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ইভিএম বিষয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় ইভিএম মেশিন নিয়ে তার প্রয়োগ ও ভোটদান পদ্ধতি তুলে ধরে প্রশিক্ষণ দেন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাইফুর রহমান শাহাবুদ্দিন ও নির্বাচন কমিশনের নুরজ্জামান শাওন।
সভায় সহকারি রিটার্নিং অফিসার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তহমিনা খাতুন, জেলা তথ্য অফিসার মোজাম্মেল হক, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী,দৈনিক ইনকিলাবের ওয়াজেদ আলী কচি সহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের কোনো জেলা শহর সাতক্ষীরার সদর আসনে এই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, এতে আপনার আমার ভোটের সুরক্ষা হবে। শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। ভোটার বাটনে চাপ দিলেই দেখতে পাবেন তার কাক্সিক্ষত প্রার্থীর নাম ও প্রতীক। এরপরই তিনি নিচের সবুজ বাটনে চাপ দিলে নিশ্চিত হবেন যে তার ভোট যথাস্থানে পড়েছে। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে সকলকে অবহতি করার আহবান জানান।
সূত্র:পত্রদূত নেট।