প্রতিটি থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসবে আকস্মিক।সন্দেহজনক হলেই মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহন ও ব্যক্তিকে আনতে হবে তল্লাশির আওতায়। সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সতর্ক দৃষ্টি থাকবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে ও ভেতরে নিশ্চিত করতে হবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন।
ঈদকে ঘিরে এভাবেই ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর বিষয়ে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।মহানগরীতে ছিনতাই প্রতিরোধেও গ্রহণ করা হয়েছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র মতে, সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির সকল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারদের (ডিসি) ৭ দফা বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা.শফিকুল ইসলাম। কোন কোন রুট ব্যবহার করে ছিনতাইকারীরা নগরীতে প্রবেশ করে এবং বের হয় সেই বিষয়েই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়েছে হাইকমান্ড। বিশেষ করে ইফতার ও সেহেরির সময় পুলিশকে দায়িত্ব পালনে আরও মনোযোগী হওয়ার কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজধানীর পুলিশপ্রধান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার প্রতি বিভাগের ডিসিদের নিজ নিজ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেই মোতাবেক ডিসিরা নিজ নিজ দায়িত্বে সাজাবেন নিরাপত্তা পরিকল্পনা।
সূত্র মতে, ডিএমপি কমিশনারের বিশেষ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ডিসিরা সকল থানা ও তল্লাশি চৌকি ধারাবাহিকভাবে তদারকি করবেন। ব্যাংকের শাখাগুলোর আশেপাশে অপ্রয়োজনীয় লোকজনের ঘোরাফেরা চ্যালেঞ্জ করতে হবে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। এমনকি তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়েও দিতে হবে। ব্যাংকের আশেপাশে পান সিগারেটের দোকান বসতে দেওয়া যাবে না।
একই সূত্র জানায়, মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ পরিবহনে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হবে। মানি এস্কর্টের বিষয়ে তাদের জানাতে হবে।
থানাগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ডিসি, এডিসি সেহরির আগে ও পরে আকস্মিক থানা পরিদর্শন করবেন। থানার মোটরসাইকেল পেট্রোল, ফুট পেট্রোল ও তল্লাশি চৌকিও এভাবে তদারকি করতে হবে।সূত্র মতে, ডিএমপি কমিশনার ইফতারের সময় হতে তারাবির নামাজ পর্যন্ত পুলিশ দায়িত্ব পালনে শিথিলতার অভিযোগের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। সিনিয়র অফিসারদের তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি এ সময়ে সবাইকে দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে বলেছেন।
এই অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ‘১৫ রোজা শেষ হয়ে গেছে। এখন মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকবে। এ সময় মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি বা টানা পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। এজন্য টহল টিমকে আরও সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রয়োজনে স্পেশাল টিম করে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে।
ট্রাফিক বিভাগের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে যানজট বাড়ে। এজন্য ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে।’
এ সময় ঢাকা ত্যাগ করা নগরবাসীকে দামী স্বর্ণালংকার আত্মীয়ের কাছে রেখে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র মতে, ডিএমপি কমিশনার আরও একটি বিষয়ে যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানে ভেরিফিকেশন তথা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আবেদনকারীর বাসায় না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা আছে কিনা তা পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) থেকে পরখ করে দ্রুততম সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিতেও বলেছেন।
ডিএমপি’র অর্ধশত থানার মধ্যে কোন কোন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিতে কতদিন সময় নিচ্ছেন সদর দপ্তর থেকে সেই বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার বিনিময়ে কোনও পুলিশ সদস্য অর্থ দাবি করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।