১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ রাত কালরাত হিসেবে চিহ্নিত। ওই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। জেগে উঠে রাজারবাগে কর্মরত বীর বাঙালি পুলিশ সদস্যরা। হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।
পূর্বসূরীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রতিবছর ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন করে থাকে। প্রতিবারের ন্যায় আজ (২৫ মার্চ ২০২২) রাতে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতীয় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতার প্রথম প্রহর উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। আলোচক ছিলেন মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম, ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
আইজিপি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে বঙ্গবন্ধু যেমনি একাকার তেমনি রাজারবাগ একটি তাৎপর্যপূর্ণ অভিধা। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী আহবানে সাড়া দিয়ে রাজারবাগে কর্মরত তৎকালীন পুলিশের বাঙালি সদস্যরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। রাজারবাগ আজও দ্যুতি ছড়ায়।
পুলিশ প্রধান বলেন, বাঙালি জাতিকে হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে একজন বঙ্গবন্ধুর জন্য। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে যে আলোক শিখা প্রজ্জ্বলন করে দিয়ে গেছেন তা আজও প্রচন্ড দাউ দাউ করে জ্বলছে।
আইজিপি বলেন, ৫০ বছর বৈশ্বিক সময়ের পরিক্রমায় দীর্ঘ সময় নয়। কিন্তু এ নাতিদীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দারিদ্র প্রায় পরাজিত হয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন হয়েছি বলে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কখনো পথ হারাবে না । আমরা পৌঁছে যাবো আমাদের স্বপ্নের সোনালী বন্দরে।
কোন পরাজিত শক্তি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান আইজিপি।
আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত পুলিশ সদস্য এবং সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
মাহবুব উদ্দীন বলেন, পুলিশ বাহিনী রাজারবাগে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সে তরঙ্গ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সারা দেশের মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করেছেন, তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অহংকার করার মত যে অতীত আছে সেটিকে বুকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে পুলিশ। এখনও বাংলাদেশ পুলিশ দেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত রুখে দিতে কাজ করছে।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বঙ্গবন্ধুর শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রেই নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তাঁর বিশাল ভূমিকা ছিল।
পরে শহিদের স্মরণে রাত ১২টা ০১ মিনিটে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার এন্ড কালচারাল ক্লাব এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।
প্রজন্ম ‘৭১, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংসদ সন্তান কমান্ড, শান্তিনগর সোসাইটি, চামেলীবাগ সমাজ কল্যাণ সমিতিসহ দশটি সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানটির সাথে যুক্ত হয়।
এর আগে বিকালে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে শিশু-কিশোরদের তিনটি ক্যাটাগরিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।