একমাত্র সন্তান দিলুকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ দিলুর মা, দিলুর শিশু সন্তান মিশাত ও নিশি বারবার মুর্ছা যাচ্ছে তাদের বাবাকে আর দেখতে পাবে না এটা ভেবে। দিলুর স্ত্রী সেই যে মুর্ছা গিয়েছেন আর জ্ঞান ফিরেনি। বাকরুদ্ধ এলাকার মানুষ। শান্তনার ভাষা তাদের জানা নেই। খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ। ধুলাবালিতে গড়াগড়ি করা দিলুর শিশু সন্তানদের পরম মমতায় বুকে টেনে নিলেন। একমাত্র ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় মাকে শান্তনা দিলেন এখন থেকে তিনিই তার সন্তান। পুলিশ অফিসারের এমন মমতা দেখে উপস্থিত সবাই হতভম্ব। শিশু সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে শান্তনা দিলেন দিলুর স্ত্রীকে। দিলুর লাশ সামনে রেখে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি করলেন সদ্য যোগদানকৃত ওসি। গত ১৭ মার্চ তিনি যোগদান করেছেন কুড়াউড়া থানায়। আর ১৭ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে কুড়াউড়া থানার গুতগুতি গ্রামে।

মোঃ দিলু মিয়া(৩২), বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। অপরদিকে তার চাচাত ভাইয়েরা সংখ্যাধিক হওয়ায় পারিবারিক সম্পতি ভোগ করতো বেশি। এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করলে দিলু মিয়াকে করা হত চরম অপমান অপদস্থ। ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ অনেক দিনের। গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে জমির ভোগ দখল নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় কলহ। এরপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই খুন করা হয় দিলু মিয়াকে। সংবাদ পেয়ে ওসি ইয়ারদৌস হাসান ছুটে যান ফোর্স নিয়ে। ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারে সোপর্দ করার আশ্বাসও রক্ষা করেছেন তিনি। সাত জন এজাহার নামীয় আসামিদের মধ্যে ইতোমধ্যে ছয় জনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেছেন। তাদেরকে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন শুনানীর অপেক্ষায় মূলতবী আছে।

গতকাল শবে বরাত উপলক্ষে সেমাই, চিনি, দুধ, বিস্কুট, কেক, চকলেট ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা ওসি নিজে গিয়ে দিলুর পরিবারকে পৌঁছে দিয়েছেন কুড়াউড়া থানার পক্ষ থেকে। অসহায় দিলুর পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হওয়ায় ওসি ইয়ারদৌস হাসান মৃত দিলুর শিশু সন্তানদের জড়িয়ে ধরা ছবি এখন সর্বত্র ভাইরাল। মাত্র এক মাসের কর্মকাণ্ডে কুড়াউড়ার আপামর মানুষের হৃদয়ে স্থান করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন এ ওসি। এমন পুলিশী কার্যক্রম অব্যহত থাকুক, জনমনে পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ুক এ প্রত্যাশা সকলের।

সূত্র:PHQ MEDIA, 22 APRIL 2019





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন