এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর কালের আলো :

ঝড়-ঝঞ্ঝা বা হুমকি-ধমকি কোনোটিই কখনও টলাতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বিচক্ষণতার সঙ্গেই কঠিন সঙ্কট নিরসন করে ধীরস্থিরভাবে নি:শঙ্ক চিত্তে এগিয়ে গেছেন। দেশ ও জনগণের স্বার্থে যখন যেটি প্রয়োজন সেটিই করেছেন, অমিত দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে কথাও বলেছেন সাহসের সঙ্গেই। আরও একবার তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার নজির দেখলো বিশ্ব।

পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদসহ র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন সরকারপ্রধান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেননি। তবে দালিলিক প্রমাণে তুলে এনেছেন রাষ্ট্রবিরোধী অভ্যন্তরীন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে যারা সফল হয়েছেন, দেশকে নিরাপদ করেছেন মানবাধিকার রক্ষা করেছেন তাদের ওপর মহাপরাক্রমশালী দেশটির এমন আকস্মিক নিষেধাজ্ঞা গোটা দেশবাসীর মতো যেন তাকেও বিস্ময়ে হতবাক করেছে; ক্ষুব্ধ করেছে।

হলি আর্টিজানের ঘটনায় উগ্র-সন্ত্রাসবাদের ছোবল থেকে দেশকে সুরক্ষিত করতে বাংলাদেশ একাই যথেষ্ট সেই বিষয়টির প্রমাণের বার্তাও আরও একবার জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে।

দেশপ্রেমিক এসব উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর আমেরিকার রাগ-ক্ষোভেরও সুলুক সন্ধান করেছেন চারবারের এই প্রধানমন্ত্রী। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছেন ‘ঘরে ইঁদুর বাঁধ কাটলে কাকে দোষ দেবেন?’ পাশাপাশি দেশকে ধ্বংস ও বিশ্বমঞ্চে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে লবিস্টদের দেওয়া কোটি কোটি ডলারের উৎস বিএনপিকে ব্যাখ্যা করতে হবে-দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এবং ১৬তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দীর্ঘ বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন সময়ের সবচেয়ে যৌক্তিক ও কার্যকর কথা তিনিই বলেন। দূরদর্শী সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে অভয় দিয়েছেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর টিমের ফ্রন্টলাইনারদেরও।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে সরকারপ্রধানের শক্ত, সাহসী ও বলিষ্ঠ এমন উচ্চারণ পূর্ণোদ্যমে উজ্জীবিত করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিদের সঙ্গে সমরে প্রথম রক্ত দেওয়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। উদ্দীপ্ত হয়েছেন পুলিশের বিশেষায়িত এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরাও।

বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রগাঢ় দেশপ্রেমের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদসহ র‌্যাব কর্মকর্তাদের বড় অবদানের কথা প্রতিভাত হয়েছে সংসদ নেতার সমাপনী ভাষণে।

তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকা আমাদের র‌্যাবের কিছু অফিসারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যাদের মধ্যে সে সময় হলি আর্টিজেন বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং বর্তমান আইজিপিও রয়েছেন। সে সময় রমজান মাসে ওই বেকারীতে মানুষকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

সে সময় বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের একটি ‘টুইট’ এর উদ্ধুতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি টুইট করেছিলেন – বাংলাদেশ এই হলি আর্টিজেনের হামলা একা সমাধান করতে পারবে না’ কিন্তু সারারাত আমরা পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব এবং কমান্ডোদের সাথে বৈঠক করে পরের দিন সকাল ৯ টার মধ্যে আমরা সেখান থেকে জিম্মীদের উদ্ধার এবং সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সফলতার সঙ্গে আক্রমন মোকাবেলায় সমর্থ হই। আর এর পর পরই আমেরিকার রাষ্ট্রদূত সেই টুইটটি সরিয়ে ফেলে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদেরকে তারা নিষেধাজ্ঞা দিল তাদের অধিকাংশই সেদিন সন্ত্রাস দমনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। আর এরপরে বাংলাদেশে আর কোন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে নাই। সেদিন বিশেষ ভূমিকা রাখা ভাল অফিসাররা কেন আমেরিকার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বলেও তিনি প্রশ্ন তোলেন।’

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি ড.বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান। প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে তাদের অগ্রণী ভূমিকা এবং অবদানকে উপস্থাপনের পাশাপাশি নিখাদ দেশপ্রেমকেও উঁচুতে তুলে ধরেছেন।

প্রকৃত অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যাই, আশাবাদী সতের কোটির বাংলাদেশ
বরাবরের মতো এবারও অভিভাবকের মতোই দেশপ্রেমিক পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ‘চির উন্নত মম শির’ নীতি মোটা দাগেই আশাবাদী করে তুলেছে দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষকেও।

তাঁরা মনে করছেন, গত এক যুগে বিডিআর বিদ্রোহের মতো দেশবিরোধী চক্রান্ত, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, হেফাজতে ইসলামের অরাজক পরিস্থিতি, সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের প্রচেষ্টা ও সরকার উৎখাতের অপপ্রয়াস সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ করে দিয়েছেন নিজের বিচক্ষণ নেতৃত্বগুণে। উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। কোন পরাক্রমশালীর রক্তচক্ষু বা চাপ এবারও তাকে টলাতে পারবে না।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভয়ানক তান্ডবের মধ্যেও জীবন-জীবিচা সচলের থিউরি দিয়ে দেশের অর্থনীতির গতিময়তা অটুট রেখেছেন। নিজের সরকারকে দাঁড় করিয়েছেন মজবুত ভিত্তির ওপর। গৌরব ও সাফল্যের অধিকারী করেছেন সতের কোটির বাংলাদেশকে।

রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞা রাজনীতিকে ঠিকই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন। কারণ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি বিশ্ব পরিমন্ডলে ‘আদর্শ’ হিসেবে বিবেচিত। সঙ্কট মোকাবেলায় তাঁর মুন্সীয়ানা মোড়লদের জন্যও অনুকরণীয়।

উপমহাদেশের ভূ-রাজনীতিক স্থিতিশীলতাকে তরান্বিত করতে একমাত্র ভরসা শেখ হাসিনাই। যুক্তরাষ্ট্রও এই বিষয়টি যেমন জানেন তেমনি বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দু’দেশের নীতি এবং এক ও অভিন্ন প্রচেষ্টার বিষয়টিও তাদের কাছে দিবালোকের মতো পরিস্কার। ফলে ‘টার্গেট’ করে দেশপ্রেমিক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের গায়ে কলঙ্ক তিলক পরিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে সহসাই সরে আসতেই হবে-অভিমত বিশ্লেষকদের।

 





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন