নবীন তিনজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র কাঁধে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দেখে এগিয়ে গেলেন একজন অফিসার। কুশল বিনিময় করলেন করোনাকালীন ব্যতিক্রমী করমর্দন দিয়ে। সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করা এই ব্যক্তি হলেন পুলিশের প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম-বার । সাধারণ সদস্যদের প্রতি পুলিশপ্রধানের এমন সহমর্মিতা দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে সরকারের নিরাপত্তা সংস্থার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দুটি হেলিকপ্টারে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এসময় পুলিশের মহাপরিদর্শকও (আইজিপি) এই দলে ছিলেন। তাদের নিরাপত্তায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। প্রতিনিধিদল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করে।

এরপর ঢাকায় ফেরার পথে পুলিশপ্রধান তার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এসময় সেখানে দায়িত্বরত তিন পুলিশ কনস্টেবলকে দেখে এগিয়ে যান আইজিপি। তাদের খোঁজখবর নেন; করেন করমর্দন। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম। মুহূর্তেই ছবি দুটি ভাইরাল হয়।

ছবি দুটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘বাহিনী প্রধান যখন সর্বকনিষ্ঠ সদস্যর সাথে এভাবে বিদায় নেন নিশ্চয়ই তার জন্য তা অনেক আবেগ ও গর্বের মুহূর্ত তৈরি করে। মান্যবর আইজিপি স্যার গতকাল পাবনার ঈশ্বরদীতে এক সংক্ষিপ্ত সরকারি সফরে আসেন। বিদায় মুহূর্তে ডিআইজি স্যার থেকে শুরু করে উপস্থিত পুলিশ পরিদর্শক সবার সঙ্গে কোভিডকালীন করমর্দন করলেন। সবার পালা শেষ করে স্যার ডিউটিরত কনস্টবলদের কাছে এগিয়ে গেলেন। ওদের চোখেমুখে আমি বিস্মিত ও আনন্দিত হওয়ার মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলাম, একজন সাহস করে বলে ফেলল খুব ভাল লাগল স্যার। স্যালুট টু আইজিপি স্যার। আপনার যোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যাব আমরা।’

বৈশ্বিক দুর্যোগে পুলিশ প্রধান তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়। নানা সৃজনশীল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে দক্ষ ও জনবান্ধব পুলিশের এক চিত্ররূপ গড়ে তুলেছেন ড. বেনজীর আহমেদ। এতে পুলিশের প্রতি বেড়েছে সাধারণ মানুষের আস্থা।

এদিকে পুলিশপ্রধানকে নিয়ে ফেসবুকে পাবনার পুলিম সুপারের এমন পোস্টে অনেকে তাদের মন্তব্য জানিয়েছেন। মিহা হাসান লিখেছেন, ‘সবার হৃদয়ের ভিতরে সুন্দর একটা মন থাকে, যা সবসময় বোঝা যায় না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে মানুষের সুন্দর মনের প্রকাশ পায়। ধন্যবাদ সম্মানিত আইজিপি স্যার।’

আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘সত্যিই আমি প্রথম দেখলাম। একজন পুলিশপ্রধান হয়েও একজন পুলিশ কনস্টেবলের এভাবে কথা বলতে।’

বোরহান উদ্দিন লিখেছেন, ‘সত্যি মুহূর্তটি প্রত্যেক সদস্যের জন্য স্মরণীয়…’

মাহবুব কবীর মিলন লিখেছেন, ‘ক্ষমতা, মানবিকতা, ডেডিকেশন এবং কমিটমেন্ট যদি এক সাথে সমন্বিত হয়, তবে এর থেকে ভাল কিছু আর হয় না। এখন সবার দায়িত্ব, ওনাকে দিয়ে করিয়ে নেয়া। ধন্যবাদ আইজিপি স্যারকে।’

খন্দকার আব্দুর রকিব লিখেছেন, ‘প্রচণ্ড সাহসী, দক্ষতায় পূর্ণ, অসম্ভব মেধাবী, সুদর্শন সাথে মানবিক আচরণ এ কারণেই তো বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় আইজিপি মহোদয়কে এই পদে এনেছেন। আইজিপি মহোদয়কে অভিনন্দন।’

মেহেদী হাসান শাওন লিখেছেন, ‘অসাধারণ লাগলো ব্যাপারটা। এতে নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের মনোবল চাঙা হয়। স্যালুট মাননীয় আইজিপি স্যার। স্যারের ব্যাক্তিত্ব ছড়িয়ে পড়ুক সকল সিনিয়র স্যারদের মাঝে এই কামনা করি। বিষয়টা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় মানবিক পুলিশ সুপার মুহিবুল স্যারকে।’

গত বছরের ১৫ এপ্রিল ড. বেনজীর আহমেদ ৩৭তম আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেন। সফলতার সঙ্গে ইতিমধ্যে এক বছর পূর্ণ করেছেন। আইজিপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে ঘোষণা করেন পাঁচ মূলনীতি- জনগণের প্রতি অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন, বিট পুলিশিং বাস্তবায়ন, পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ।

এরই মধ্যে পুলিশে নানা দিকে, নানা ক্ষেত্রে ঘটেছে উন্নয়ন। হয়েছে নানামাত্রিক ইতিবাচক সংযোজন। তা যেমন পুলিশ সদস্যদের জন্য, তেমনি বাহিনীর জন্য। আর তার মাধ্যমে জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশের এক এক নির্ভয় মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে।

সংবাদ ঢাকা টাইম্স টুয়েন্টি ফোর ডটকম।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন