অনেকে কাউকে দিয়ে ফোন করিয়ে নিয়ে তারপর আমার কাছে আসেন। তাদের বলি, আপনি সরাসরি এসে দেখেন না, সহায়তা পান কি-না। তারপর না হয় ফোন করিয়ে নিয়েন। আমার কাছে নাম-পরিচয় বড় নয়। একজন প্রভাবশালীও যা, একজন সাধারণ মানুষ তাই’।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব মন্তব্য করেছেন।

অনেক পুলিশ সুপার যখন জনগণের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চান, তখন এই পুলিশ সুপারের দরজা থাকে সব সময় খোলা। সকাল থেকেই শুরু হয় তার এ সাক্ষাতদান আর নানা ধরনের সালিশ। মামলার বাইরে তার এ কার্যালয়টি সালিশি বৈঠকখানা হিসেবেও বহুল পরিচিতি পেয়েছে। সারাদিনে দেড়-থেকে দুইশ’ লোক হাজির হন তার কার্যালয়ে।

অনেকেই আসেন মামলার বিষয়ে তদবির করতে। কিন্তু এসপি মামলায় সহায়তা না করে উভয়পক্ষকে বসিয়ে আপোষ করে দেন। আবার অনেক সময় সবকিছু শোনার পর সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফয়সালা করার নির্দেশ দেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের এ উদ্যোগ এলাকাবাসীর মাঝেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকাল দশটায় যখন তার কার্যালয়ে বসে কথা হচ্ছিল, ঠিক তখনই একজন প্রবাসী ফোন করে মামলা করতে সহায়তা চান। পুলিশ সুপার তাকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তার কার্যালয়ে আসার অনুরোধ জানান।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই এসপির কার্যালয়ে হন্তদন্ত হয়ে হাজির হন সেই প্রবাসী। জেলা শহরের তার কয়েকটি দোকান দিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এসপি তাকে অনুরোধ করলেন, আগেই মামলা না করে কিছুটা সময় তাকে দেওয়ার জন্য।

তাকে আশ্বাস দিলেন, মামলা না হলেও উপযুক্ত বিচারের ব্যবস্থা করে দেবেন। প্রবাসী থাকতে থাকতেই প্রতিপক্ষকে ডাকার ব্যবস্থা করলেন সমঝোতার জন্য।

জানা গেলো, এটি তার নিত্যদিনের রুটিন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তার এ কার্যক্রম।

পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাগেরহাটের লোকজন অনেক ভালো। যে কারণে আমাদের এ কাজটি সহজে সম্ভব হয়। আমিও এতে খুবই আনন্দ পাই’।

প্রশ্ন ছিল মাসে কি পরিমাণ মামলার আপোষ-রফা করেন তিনি। জবাবে বলেন, ‘দেখেন এভাবে কোনো পরিসংখ্যান দেওয়া কষ্টকর। আর আমরা দিতেও চাই না। আমরা প্রধানত ছোট-খাটো মামলাগুলোর আপোষ করে দেই। আমাদের চেষ্টা থাকে, মামলা দায়েরের আগেই ফয়সালা করার’।

বাগেরহাটের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে এসপি বলেন, এটি অনেকটা প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি লক্ষ্যনীয় বলেও মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।

তিনি বলেন, ‘এখানকার বেশিরভাগ লোক বন ও মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বলা চলে, জীবিকা হচ্ছে প্রকৃতি প্রদত্ত। যে বছর মাছের উৎপাদন ও দাম ভালো থাকে, সে বছর আইন-শৃঙ্খলাও ভালো থাকে। দেখা গেছে, আইলা-সিডরের পর অনেকের ঘেরের মাছ ভেসে যায়। বেকার হয়ে পড়েছিলেন লোকজন। আর তখন চুরি-ছিনতাই বেড়ে গিয়েছিল’।

এই পুলিশ সুপারের বক্তব্য হচ্ছে, ‘কোনো রেফারেন্সের প্রয়োজন নেই। নো ‍দালাল। আপনার সমস্যা, আপনি নিজেই চলে আসবেন’।

তবে তিনি প্রথমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারপর সেই কর্মকর্তা ‍কাজ না করলে তার ওপরের কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার। কাজ না হলে ফোন অথবা সরাসরি সাক্ষাত করার জন্য। সবার জন্য তার দরজা খোলা। এখানে পোশাক কিংবা তার বংশ পরিচয় বিবেচ্য বিষয় নয়।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন