প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে। তবে ২০০৭ সালে যেটা হয়েছে, ক্ষমতা ছাড়াও সবার আগে কিন্তু আমাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা করতেই হবে। সেইজন্য আমরা কারাগারগুলো উন্নত করে যাচ্ছি।’

রোববার(২৭ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে কেরানীগঞ্জে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।

উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই কারাগারটিতে শুধু নারী বন্দীদের রাখা হবে। বর্তমানে সব নারী বন্দীকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। গাজীপুরের কাশিমপুরে দেশের প্রথম মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের পর দেশে এটি দ্বিতীয় মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। এতে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত উভয় প্রকারের বন্দী রাখা হবে।

এর নির্মাণ কাজ বেশ কয়েক মাস আগে শেষ হলেও করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এদিন কেরানীগঞ্জে একটি এলপিজি স্টেশনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এলপিজি স্টেশন থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। ফলে এখন থেকে আর কাঠ পুড়িয়ে রান্না করতে হবে না। এলপিজি গ্যাসে রান্না হবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের নতুন প্লেন ধ্রুবতারার উদ্বোধন করেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে সদ্য যুক্ত হওয়া নতুন ড্যাশ ৮-৪০০ ‘ধ্রুবতারা’র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে একটি সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সব বিমান ক্রয় করছি যেগুলো সব থেকে আধুনিক এবং উন্নতমানের। আর আজকে যে বিমানটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছি তার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সক্ষম হব।’

বাংলাদেশের চমৎকার ভৌগলিক অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বাড়াতে পারি তাহলে সবদিক থেকেই আমাদের উন্নতি হতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ইতিমধ্যেই অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। যার অংশ হিসেবে আজ এই নতুন উড়োজাহাজ ড্যাশ ৮-৪০০ এর উদ্বোধন করছি।’

নতুন বিমানটির নাম তিনি ধ্রুবতারা রেখেছেন এবং নতুন আনা বিমানগুলোর নামকরণ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনিই করেছেন, যে কাজে তাকে ছোট বোন শেখ রেহানা সহযোগিতা করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

‘ধ্রুবতারা’ আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দেয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি আর ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে। কাজেই, এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ধ্রুবতারা নামটি পছন্দ করেছি। নামগুলোর পছন্দ করায় আমাকে সহযোগিতা করেছেন আমার ছোট বোন শেখ রেহানা।’

করোনাভাইরাস এসে আমাদের সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে, সমস্ত কর্মকান্ডকে স্থবির করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। এটা শুধু বাংলাদেশের নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপীই এই সমস্যাটা হচ্ছে।

তিনি এ সময় নতুন বিমান আনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিমানের পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত সাহসী’ আখ্যায়িত করে সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর ২১ বছর দেশ চলেছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা। ক্ষমতা দখলে রাখা তাদের লক্ষ্য ছিল বলেই দেশের উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে উন্নয়নে ধারা অব্যাহত রাখে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যগণ, সচিব এবং বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। গণভবণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ২০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, বিভিন্ন জেলা সদরে নির্মিত ছয়টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং একটি এলপিজি স্টেশন ও উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন