খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ মহান বিজয় দিবস-২০১৮ উদযাপিত হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে ৩১বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়।

সকাল সাড়ে আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। পরে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বাহিনী/প্রতিষ্ঠানের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান ও শরীরচর্চা প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনীতে বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন। খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ দিদার আহম্মদ, পুলিশ কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির এবং পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস পিআইডি’র আয়োজনে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ওপর স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ হাবিবুর রহমান এবং পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। অন্যান্যর মধ্যে বক্তৃতা করেন বৃহত্তর খুলনা মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার শেখ ইউনুছ আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার সরদার মাহবুবার রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন মিন্টু, রকিব উদ্দিন বাবলু ও স ম রেজওয়ান আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মোঃ আলমগীর কবীর। ধন্যবাদ জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোঃ ইকবাল হোসেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, শিশুসদন ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদ জোহর নগরীর মসজিদ সমূহে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নগরীর সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বেলা দুইটা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থানীয় নৌ-বাহিনীর জাহাজ খুলনাস্থ বিআইডবি¬উটিএ রকেট ঘাটে জনসাধারণের দর্শনের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়। বিভাগীয় যাদুঘরে সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত শিশুসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিনা টিকেটে উম্মুক্ত রাখা হয়।

বিকেলে পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলাদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান এবং খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে খুলনা সিটি কর্পোরেশন বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ হাদিস পার্কে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ’।

দিবসটি উপলক্ষে খুলনা বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। ১৬, ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবি ও পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ১৬-১৮ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা বিসিক-এর উদ্যোগে বিসিক ভবন প্রাঙ্গনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার আয়োজন করে।

এছাড়াও দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন