আগত ৩০ টি বাইচ দলের অংশগ্রহণে আজ ১৩ তম খুলনা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। নৌকার মাপের ওপর ভিত্তি করে বাইচগুলোকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। এবং প্রতিটি দল থেকে বিজয়ী ১ম, ২য় এবং ৩য় দল জিতে নেয় নগদ পুরষ্কার।
এ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় খুলনা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়ছে। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। খুলনা ও এর আশে পাশের এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ রূপসা নদীর দুই ধারে উপস্থিত থেকে এই বাইচ উপভোগ করে। পাশাপাশি গ্রামীণফোনের ফেসবুক ফ্যানপেজ থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় সারা দেশের মানুষের জন্য।
এবারের প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা,তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল থেকে দশটি বড় এবং নয়টি ছোট বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর ফরিদপুর এলাকার এগারটি বাচারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল।
বড় দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এক লক্ষ টাকা জিতে নেয় খুলনার কয়রার সুন্দরবন টাইগার। দ্বিতীয় হয়ে পুরষ্কার হিসেবে ৬০ হাজার টাকা পান খুলনার তেরখাদার ভাই ভাই জলপরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা পান ঐ একই এলাকার আল্লাহ ভরসা।
ছোট গ্রুপে প্রথম হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার পান খুলনার পাইকগাছার ভাই ভাই দুরন্ত । দ্বিতীয় বিজয়ী দল কয়রার সোনার তরী পায় ৩০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাইকগাছা, খুলনার দুরন্ত পায় ২০ হাজার টাকা।
বিশেষ বাছারি দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেয় খুলনার সোনাডাঙ্গার ফলিয়া এন্টারপ্রাইজ। দ্বিতীয় হিসেবে ৩০ হাজার টাকা পায় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সোনার তরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা পায় ঐ একই এলাকার মা-বাবার আশীর্বাদ।
সকালে এই আয়োজনকে ঘিরে নগরিতে আয়োজন করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র্যা লি। ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এই র্যা লি উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে দুপুর দু’টায় রূপসা ১ নং কাস্টম ঘাটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে চারটা ৩০ মিনিটে শেষ হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, সভাপতি হিসেবে ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন। গ্রামীণফোনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এর খুলনা সার্কেল বিজনেস হেড মোঃ আওলাদ হোসেন, হেড অব ব্র্যান্ড এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং নাফিস আনোয়ার চৌধুরী, খুলনা সার্কেল মার্কেটিং হেড আবুল হাসনাত, খুলনা রিজিওনাল হেড আহসান হাবিব সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে উপস্থিত ছিলেন এর সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম, প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান সহ অন্যান্যরা।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মিজানুর রহমান মিজান, সংসদ সদস্য,খুলনা-২ নং আসন,খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রাকিবুল ইসলাম,খুলনা জেলা পুলিশ সুপার জনাব এস এম শফিউল্লাহ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ জিয়াউর রহমান,খুলনা বিআরটিএ’র উপপরিচালক জনাব জিয়াউর রহমান বাবু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন, “গ্রামীণফোন সবসময়ই বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক। গ্রামীণফোন মনে করে যে একটি দেশের উন্নয়নে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিরাট ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গ্রামীণফোন তাই সব সময় এ ধরণের অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে”।
নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, “নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে-এই স্লোগান নিয়ে আমরা র্দীঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আসুন নদীকে ভালবাসি, নদীকে ভাল রাখি।”।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিল্লাল হোসেন খান, উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড; ডাঃ রেজাউল করিম, ভেটেরিনারি সার্জন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন; নিজাম উর রহমান লালু, সহ-সভাপতি, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি; মোঃ মোতালেব হোসেন মিয়া, সদদ্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, খুলনা।
সন্ধ্যায় রূপসা ফেরি ঘাট চত্ত্বরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পুরো আয়োজনটি খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যা ব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, রূপসা সেতু কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা হয়।