খুলনা থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যাবে। এ সময় সুন্দরবনের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভোলা-হাতিয়া-নিঝুমদ্বীপ-কুতুবদিয়া-পতেঙ্গা-মহেশখালী-কক্সবাজার-ইনানী ও টেকনাফের দৃশ্যও উপভোগ করা যাবে। পর্যাপ্ত পর্যটক পাওয়া গেলে খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটকে কলকাতা হয়ে চেন্নাই পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। প্রস্তাবিত এ রুটে সরকার কোনো জাহাজ না নামালেও বেসরকারি জাহাজ চলাচলের জন্য অবকাঠামো তৈরি করে দেবে।
গত ৩০ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক সমিতির কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন জাহাজ চলাচলের আবেদন করলে তা অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে তার আগে উপকূল অঞ্চলের তীর ঘেঁষে চলাচলের জন্য জাহাজের ড্রাফট তৈরি করবে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজমের পাশাপাশি খুলনা-কলকাতা চেন্নাই রুটে ক্রুজশিপ চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। একই সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের আগমন ও বহির্গমন সংক্রান্ত ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকিং অন বোর্ড করার সিদ্ধান্ত হয়।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর সহসভাপতি রাফিউজ্জামান বৈঠকে জানান, ‘খুলনায় অনেক বিদেশি পর্যটক যাতায়াত করেন। সুন্দরবন হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করলে অনেক বিদেশি পর্যটক পাওয়া যাবে। এতে পর্যটনশিল্পের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও এতে উৎসাহিত হবেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩১ মার্চ থেকে কোনো পর্যটক সেন্টমার্টিনে রাত যাপন করতে পারবে না। এই অবস্থায় খুলনা থেকে যাত্রা করে জাহাজটি রাতে কক্সবাজারে অবস্থান করতে পারে। পরদিন সকালে জাহাজটি সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে পারে।’ বৈঠকে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার কে এম জসীমউদ্দিন সরকার জানান, ‘খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটে নাব্য সংকট রয়েছে। তবে ছোট আকারের ক্রুজশিপ দিয়ে সার্ভিস দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের এ ধরনের কোনো জাহাজ নেই। থাইল্যান্ড, ইতালি ও ডেনমার্কসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে এ ধরনের জাহাজ রয়েছে। এসব দেশ থেকে ভাড়ায় জাহাজ আনা যেতে পারে। পর্যটকবাহী এ রুট চালু করার জন্য টেকনাফ, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে ঘাট ও জেটি নির্মাণ করতে হবে। প্রস্তাবিত এ নৌরুটে বয়া ও রোড মার্কিং করতে হবে। পর্যটকদের জন্য ওয়েটিংরুম, ওয়াশরুম, বাথরুমের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধান করলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যাবে। তিনি আরও জানান, সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজ ও তীর ঘেঁষে চলাচলকারী জাহাজের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার বৈঠকে জানান, খুলনার মানুষ ভ্রমণপিপাসু। এ রুট চালু করা গেলে শুধু খুলনার মানুষ নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটরাও আকৃষ্ট হবে। সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হলে এখানে পর্যটনশিল্পের বিপ্লব ঘটবে।