জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়িছাড়া কয়েক তরুণকে খুঁজতে গিয়ে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব পেয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

“জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামের এই সংগঠনের হয়ে জিহাদে অংশ নিতেই গত মাসে কুমিল্লা থেকে বাড়ি ছাড়েন আট তরুণ। এই তরুণদের খোঁজে মাঠে নেমে র‍্যাবের গোয়েন্দারা সন্ধান পান নতুন সংগঠনটির,” বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, কুমিল্লা থেকে আট তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁদের পরিবার। ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে নেমে র‍্যাব জানতে পারে তাঁরা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি ছেড়েছেন।

বাড়িছাড়া চার তরুণসহ গ্রেপ্তার ৭

নবগঠিত উগ্রবাদী গোষ্ঠীটির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি বাড়িছাড়া চার তরুণসহ সাত সন্দেহভাজন জঙ্গিকে ঢাকার মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান মঈন।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষক হোসাইন আহম্মদ (৩৩), ভোলার একটি সরকারি অফিসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ নেছার উদ্দিন (৩৪) এবং কলেজ ছাত্র বনি আমিনের (২৭) বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। এই তিনজন সংগঠনটির রিক্রুটার হিসেবে কাজ করেন বলে জানিয়েছেন র‍্যাব কর্মকর্তারা।

গ্রেপ্তার বাকি চারজনের মধ্যে ২৩ শে আগস্ট কুমিল্লায় নিজেদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যান ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯) ও মোঃ হাসিবুল ইসলাম (২০)। রোমান শিকদার (২৪) এক মাস আগে গোপালগঞ্জ থেকে এবং মোঃ সাবিত (১৯) দুই মাস আগে ঢাকার উত্তরা থেকে বাড়ি ছেড়ে যান।

গ্রেপ্তার অভিযানের সময় নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা ও সংগঠনটির কর্মপদ্ধতির কপি ও জিহাদি উগ্রবাদী ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র‍্যাব।

এই সাত সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে জানিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বেনারকে জানান, আসামিদের আদালতে হাজির করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নতুন জঙ্গি সংগঠন

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হোসাইন আহম্মদ পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে কিছু সদস্য সংগ্রহ করে ২০১৭ সালে এই নতুন সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন।

“২০১৯ সালে সংগঠনটি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) হিসেবে নামকরণ করা হয়,” জানিয়ে মঈন বলেন, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন, বিশেষত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজি এর বিভিন্ন পর্যায়ের কতিপয় নেতা ও কর্মীরা একত্রিত হয়ে এই উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে।”

হোসাইন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানান তিনি।

মঈন জানান, সন্দেহভাজন জঙ্গিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ভোলা ও পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত চর এলাকায় ধাপে ধাপে শারীরিক ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল তাঁরা।

“তাদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল যাতে তারা বিভিন্ন পেশার অধীনে ছদ্মবেশ বজায় রাখতে পারে,” জানান মঈন।

তিনি বলেন, নিরুদ্দেশ তরুণদেরকে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।

কুমিল্লা হতে নিখোঁজ আট তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে জানিয়ে মঈন বলেন, নিলয়কে তাঁর পরিবারের হেফাজতে রেখে বাকি নিখোঁজ সাত সদস্য ও জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

তিনি জানান, নিলয়ের দেয়া তথ্যমতে বনি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে বনি আমিনের তথ্যমতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা থেকে নেছারকে এবং তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোসাইন, রিফাত, হাসিব, রোমান ও সাবিতকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করা হয়।

জঙ্গিবাদ ভুল পথ: নিলয়

খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা ছেড়েছিলেন জানিয়ে নিলয় বলেন, “এটা একটা ভুল পথ। কোনো কিছু করার আগে জেনেবুঝে করা উচিত। কেউ আমার মতো না বুঝে এমন ভুল করবেন না।”

র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন নিলয়।

“আমি চার থেকে পাঁচ দিন হিজরতে ছিলাম। তার মধ্যেই বুঝতে পারি, এটা ভুল পথ। আসলেই এটা ভুল পথ। এই ভুল পথে কেউ যাতে পা না বাড়ায়, সেই অনুরোধ আমি জানাই,” বলেন নিলয়।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন