উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পদ সৃষ্টি করে দিয়েছি কিন্তু সেখানে চিকিৎসক পাই না। নিয়োগও দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন এই অবহেলা মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চয়ই জনগণ আকাঙ্খা করে না।
আমরা উপজেলা হাসপাতালগুলোকে উন্নত মানের করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালে কমপক্ষে ১০জন চিকিৎসক থাকার কথা কিন্তু কোথাও একজন, কোথাও খুব বেশি হলে চারজন। সেখানে কিন্তু চিকিৎসক থাকে না। মানুষ তাহলে সেবা পাবে কীভাবে?
রোববার (৭ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত ‘চিকিৎসক সম্মেলন-২০১৮’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
টানা মেয়াদে সরকারের থাকার ফলে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও গৃহীত কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, উপজেলা হাসপাতালগুলোকে আমরা যেমন উন্নত মানের করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। যেখানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কোথাও একজন, কোথাও খুব বেশি হলে চারজন। সেখানে কিন্তু চিকিৎসক থাকে না। মানুষ তাহলে সেবা পাবে কীভাবে? এটা আমার প্রশ্ন।
‘পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি কিন্তু সেখানে আমরা চিকিৎসক পাই না। নিয়োগও দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন এই অবহেলা মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চয়ই জনগণ আকাঙ্খা করে না’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের ভেবে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।
‘তবে একটা অসুবিধা আছে জানি, সেটা হলো থাকার অসুবিধা। ইতোমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আমরা বহুতল বিশিষ্ট ফ্ল্যাট তৈরি করে দেবো। যারাই যাবেন সেখানে যেন ভাড়া থাকতে পারেন। সেই ব্যবস্থা করে দেবো।
তিনি আরও বলেন, ‘সব সময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকে, দেশের চিকিৎসা সেবা মানুষ পাবে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার ৮৪৬ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। আরও বিশেষভাবে পিএসএসির মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে নতুন নিয়োগেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি পরীক্ষা হয়েছে, সেখানে যে রেজাল্ট এসেছে, সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং। সেখানে ৬০ ভাগ মেয়েরা পাস করেছে ৪০ ভাগ ছেলেরা পাস করেছে। এ জন্য ছেলেদের পড়াশোনার দিকে আরও নজর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনের নিয়ম হচ্ছে, যে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয় সেই সময় যখন শেষ হয়। ওই ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা মানে তখন যে সরকার হবে সেই সরকার শুধু রুটিনওয়ার্ক কাজ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কাজ করতে পারে না।এটাই হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ের দায়িত্ব।
আধুনিক যুগে স্বাস্থ্যখাত বা চিকিৎসাসেবাও অনেক আধুনিকায়ন হয়ে গেছে। নতুন নতুন ডেফিনিয়েশন এসে গেছে। নতুন নতুন চিকিৎসা স্বাস্থ্যও কিন্তু চলে এসেছে। তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চিকিৎসা সেবার মান এবং শিক্ষার মানটাও বৃদ্ধি করতে হবে। যেন আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি।
আমাদের দেশের প্রাইভেট হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ খুব বেশি ছিল না। প্রথমবার সরকারে এসে সমস্ত মেডিকেল যন্ত্রপাতির উপর ট্রাক্স কমিয়ে দিয়ে বেসরকারিখাতকে প্রসারিত করে উন্মুক্ত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইভেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কী কারিকুলাম পড়াচ্ছে, কী ট্রেনিং হচ্ছে বা ট্রেনিং নেওয়ার মতো আশপাশে হাসপাতাল আছে কী না? সেই বিষয়টা দিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। যাতে চিকিৎসা সেবাটা যথাযথভাবে সবাই পড়তে পারে।
বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একজন ডাক্তার রোগীর সঙ্গে কথা বলেও কিন্তু অর্ধেক রোগ ভাল করে দিতে পারে। ডাক্তারদের কাছ থেকে মানুষ সেই সেবাটাই চায়। আশা করি আপনারা সেই সেবাটাই দেবেন। এবং জাতির পিতার কথাগুলিও স্মরণ রাখবেন।
বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন কনফেডারেশন ফর মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ইন এশিয়া অ্যান্ড ওশেনিয়া (সিএমএএও)-এর সভাপতি রাভিন্দ্রান আর নাইডু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, বিএমএর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বডুয়া।