রাজধানীতে ছিনতাই ও টানাপার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি)। এসব প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনার সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি নির্দেশনা হলো— ‘চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।’
ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ ও থানা পুলিশকে ১৯টি লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম।
কমিশনার লিখেছেন, বাসের যাত্রীরা যাতে তাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোন বাসের জানালার দিকে নিয়ে কথা না বলে সে বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা চালক ও হেলাপরদেরকে নিয়মিত ব্রিফিং করবেন। বাসের গায়ে স্টিকার লাগিয়েও যাত্রীদের সচেতন করা যেতে পারে।
# একইভাবে রিকশায় আরোহীরা যাতে মোবাইল ফোন ডান কানে ব্যবহার করেন ও ব্যাগ ডান পাশে রাখেন; এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করা যেতে পারে।
# বিগত ৩-৪ বছরের ছিনতাইয়ের স্পটগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সিসিটিটিভর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। খতিয়ান থেকে মামলার সংখ্যা বের করতে হবে। চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের নজরদারিতে আনা যেতে পারে।
# ঢাকা মহানগরীতে যে সমস্ত চেক পোস্ট রয়েছে সেগুলোও সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
# প্রতিটি মামলার আসামিদের এনআইডি, পাসপোর্ট নং চার্জশিটে উল্লেখ করতে হবে।
# সিআইএমএস-এ র্যান্ডম ভিত্তিতে নির্দিষ্ট বাড়ির ভাড়াটিয়া সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করবে। তাৎক্ষণিকভাবে নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য আদালতের অনুমতি গ্রহণপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) এবং সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট ডিএমপি ব্যবস্থা নেবেন।
# আইনগত সহায়তার বিষয়ে বাদিদের প্রত্যাশা কী তা জানতে হবে। ইন্টারনাল ওভারসাইট শাখা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
# পুলিশ লাইন, পিওএম-এ অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যরা যাতে অবৈধ কাজে না জড়িয়ে পড়ে সেজন্য রোলকলে তাদের সচেতন করতে হবে। তাদের সরকারি চাকরির সুবিধাগুলো উল্লেখপূর্বক সচেতন করতে হবে। বেআইনি কাজে জড়ালে পরিণতির বিষয়েও সাবধান করতে হবে।
# এছাড়াও যেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সাবধানতার জন্য সেগুলো প্রচার করা যেতে পারে।
# গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিউটিরত অফিসারদের ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, বডি ওর্ন ক্যামেরা, শর্ট আর্ম ব্যবহার করতে হবে।
# মোটরসাইকেল চোরের তালিকা প্রস্তুত করতে কাজ করবে গোয়েন্দা বিভাগ।
মালিকবিহীন উদ্ধারকৃত হারানো মোটরসাইকেলের সকল তথ্য সিডিএমএস-এ আগামী অপরাধ পর্যালোচনা সভার আগেই এন্ট্রি দিতে হবে।
# রমনা-গুলশান বিভাগ দুই বছরের বেশি সময় মামলা মুলতবি থাকার কারণ লিখিতভাবে জানাবেন।
# ছিনতাইকারী ও টানাপার্টির তালিকা তৈরি করে স্পেশাল টিমের মাধ্যমে থানা ও গোয়েন্দা বিভাগ তাদের গ্রেফতার করবে।
# থানার টহল পার্টি প্রতিটি মহল্লার সিকিউরিটি গার্ডদের সার্বক্ষণিক তদারকি করবে। তাদেরকে থানার ফোন নম্বর দিতে হবে এবং সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
# স্বর্ণের দোকানে নিযুক্ত সিকিউরিটি গার্ডদের নাম, ঠিকানা ও এনআইডি যাচাই করে নিতে হবে।
# যানজট নিরসনে পার্শ্ববর্তী জেলার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সীমানায় গিয়ে কাজ করতে হবে।
# মাদকসেবীদের ডোপ টেস্ট করে মামলা দিতে হবে।
মোবাইল ছিনতাই প্রতিরোধে গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করবে। কীভাবে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে মোবাইল ফোন বিক্রি করে তা উদঘাটন করতে হবে।
ডিএমপি সদর দফতরের গত ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরের ৫০ থানা এলাকার ৫৭৫টি জায়গায় প্রায় ৫০০ ছিনতাইকারী সক্রিয় আছে। এরা পথচারী, রিকশাযাত্রী, সিএনজি ও বাসযাত্রীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে।
চলতি মাসে ডিএমপি ও র্যাব একাধিক অভিযানে অন্তত তিন শতাধিক ছিনতাইকারী, মলমপার্টি ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
কমিশনারের নির্দেশনার বিষয়ে ডিএমপি জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন প্রতিবেদক কে বলেন, ‘ছিনতাই, চুরি ও টানাপার্টি প্রতিরোধে ডিএমপির সকল বিভাগের ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় বাসাবাড়ি ও মার্কেটের নিরাপত্তা কর্মী ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে থানা পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করবে।’