শেখ রাসেলের ৫৫ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ছোট ভাইয়ের স্মৃতি হাতড়ে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে রাসেল বেঁচে থাকলে দেশের জন্য অনেক কিছু করত বলেও আফসোস করেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেলের ৫৫তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ রাসেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আজকে ৫৪ বছর বয়স পূরণ করেছে রাসেল। আজ তাকে দেখতে কেমন লাগতো? আমার ভাইকে দেখতে কেমন লাগতো? আজকে রাসেল আমাদের মাঝে নেই। আমি আমার রাসেলকে হারিয়েছি। কিন্তু লাখো রাসেলকে পেয়েছি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘রাসেলের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। ঠিক যেই মুহূর্তে রাসেল জন্মায় তখন আব্বা খুব ব্যস্ত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ফাতেমা জিন্নাহ প্রার্থী। তিনি সেই নির্বাচনে প্রচারণার কাজে চট্টগ্রামে ছিলেন। অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন। রাসেলের জন্ম হওয়ার পর আমরা তাকে খবর দিই।’
রাসলকে স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চার ভাই-বোন উদ্বিগ্ন হয়ে বসে ছিলাম এই ছোট্ট শিশুটির জন্ম মুহূর্তটা এবং তারপর তাকে কোলে নেয়া। তাকে লালন-পালন করা তার পাশে থাকে। জাতির জনক ৬৭ সালে যখন কারাগারে গেলেন রাসেলের বয়স তখন দুই বছরও হয়নি। তখনই সে বাবার স্নেহ বঞ্চিত হলো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কারাগারে যেতাম আব্বার সঙ্গে দেখা করতে। রাসেল কিছুতেই আসতে চাইতো না। সে বাবাকে ছাড়া আসবে না। বাবাকে নিয়ে ঘরে ফিরবে। সেই সময় আমার বাবা বলতে বাধ্য হলেন, এটা আমার বাড়ি। আমি আমার বাড়িতে থাকি। তুমি তোমার মায়ের বাড়িতে যাও। তখনও সে ভালো করে কথাও বলতে পারে না। তারপরে সে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করত। তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে আসতে হতো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দিন আমরা জেলখানায় দেখা করতে যেতাম সেই দিন সে খুব অস্থির থাকত। ঘুমাতে চাইতো না, খেতে চাইতো না। অনেক সময় মধ্য রাতে উঠে বসে থাকতো, আমাদের সবাইকে ডাকতো। আমরা সব ভাই-বোন গিয়ে তার কাছে বসতাম। সে কিছু বলতে পারছে না। সে তার মনের ব্যথাটা জানাতে পারছে না। কিন্তু তার বেদনাটা আমরা বুঝতে পারতাম।’
১৯৭৫ সালে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী, তিন পুত্র দুই পুত্রবধূসহ মোট সাতজনকে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে রক্ষা পান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দরিদ্র মানুষের সঙ্গে নিজের খাবার ভাগ করে খেতেন। তিনি সব সময় তা করতেন। ঠিক সেই গুণটি রাসেলের মধ্যেও ছিল। গ্রামে গেলে দরিদ্র শিশুদের যে কিছু দিতে হবে তা সে চিন্তা করতো। রাসেলের খুব শখ ছিল বড় হয়ে সে আর্মি অফিসার হবে। সে কাঠের বন্দুক বানাতো। সেটা নিয়ে খেলা করতো।’
‘শিশুদের প্রতি তার দরদ ছিল। শিশুদেরকে সে কিছু না কিছু দিতো। বেঁচে থাকলে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারতো রাসেল। কিন্তু ঘাতকরা একজন ছোট্ট শিশুকেও বাঁচতে দেয়নি।’
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম নেন শেখ রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় রক্ষা পাননি শিশু রাসেল। তখন তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।