জনসাধারণকে সচেতন এবং সম্পৃক্ত করার মাধ্যমেই ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নয়ন সম্ভব-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দ্বারা zime
০ মন্তব্য 47 দর্শন

 

ট্রাফিক শৃঙ্খলা কাঙ্খিত মানে নিয়ে আসার জন্য নগরে বসবাসকারী জনসাধারণকে সচেতন এবং সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নয়ন সম্ভব বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এনডিসি, পিএসসি (অব.)।

আজ সোমবার (২১ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি.) বেলা ১২ টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাজধানী ঢাকার জনবসতির ঘনত্ব অত্যাধিক। বর্তমানে প্রায় ২ কোটিরও বেশি লোক এই শহরে বসবাস করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহন ব্যবস্থার শৃঙ্খলা এবং আধুনিকায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি। পাশাপাশি একই সড়কে রিক্সা, ঠেলাগাড়ীসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহনও চলে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল ও কাঠামোবদ্ধ ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা কঠিনতর হচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের সাথে ছাত্র-জনতা, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণী পেশার লোকজন তাদের কায়িক শ্রম ও মূল্যবান পরামর্শে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। ট্রাফিক সিগন্যাল দেশীয় প্রযুক্তিতে ব্যবহারের মাধ্যমে চালু করার জন্য একটি গবেষক দল কাজ করছে। এছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। শুধুমাত্র সরকার কিংবা পুলিশের পক্ষে কাজ করার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার আশানুরূপ উন্নয়ন সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন নগরে বসবাসকারী সকলের অংশগ্রহণ। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন গাড়ীর চালক এবং ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নগরবাসীকেও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ অদ্য ২১ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিঃ থেকে ৪ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ পর্যন্ত পক্ষকাল ব্যাপী একটি কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর ফলে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতিশীলতা আসবে তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনভোগান্তি অনেক কমে আসবে।

পরে বেলুন উড়িয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা এবং ট্রাফিক পক্ষের সাফল্য কামনা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর আগে তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ফোর্সের ব্যারাক ও মেস পরিদর্শন করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশ এক প্রকার প্রশাসনবিহীন ছিল। সে সময় আপনারা দেখেছেন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ছাত্ররা কীভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারুণ্যের শক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজে লাগাতে চায়। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা ও সচেতনতার অভাব। দুর্ঘটনা রোধে আমাদেরকে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক পক্ষের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে নগরীর যানজট নিরসন করতে সক্ষম হবে।

বিশেষ অতিথি প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ, এনডিসি, পিএসসি (অব.),বলেন, আপনারা জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ, বাংলাদেশের বিভিন্ন দেয়ালে অনেক গ্রাফিতি ও লিখন দেখেছেন। আমরা নতুন মানুষ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু নতুনত্ব দেখতে পাচ্ছি না। মানুষ চায় পরিবর্তন, মানুষ চায় সেবা। গতানুগতিক যে সেবা পেয়ে আসছে ট্রাফিকের কাছ থেকে তারা এর পরিবর্তন চায়। মানুষ নিরাপদ সড়ক ও যানজটমুক্ত শহর চায়।

তিনি বলেন, আমরা গতানুগতিক ট্রাফিক পক্ষ চাই না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত এই ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪ এর মাধ্যমে মানুষ নতুন একটা কিছু দেখতে পারবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি বলেন, ঢাকা মহানগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ রাত-দিন পরিশ্রম করে যান চলাচলকে স্বাভাবিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় এই সমস্যা সমাধানে একদিকে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা, কার্যকরী উদ্যোগ ও অন্যদিকে সকল নগরবাসীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা, সচেতনতা ও সতর্কতা।

তিনি বলেন, ৫ ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর যে সময় রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না সে সময় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী স্কাউটস ও বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ঢাকা শহরসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। তাদের এই সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

তিনি বলেন, ট্রাফিক পক্ষ চলাকালে সম্মানিত নগরবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জনবহুল এলাকা যেমন বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল ও মার্কেটে ট্রাফিক সম্পর্কিত যেকোনো সেবা সহজীকরণ করা হবে।

বাস, ট্রাক চালক ও মালিকদের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মত বিনিময় সভা ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮ টি ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় সচেতনতামূলক সভা ও কর্মসূচি এর আয়োজন করবে। এই ট্রাফিক সেবা সপ্তাহে ছাত্র-জনতাসহ সকল পেশার মানুষকে পুলিশের সাথে নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে উন্নত করতে একসাথে কাজ করবো। এ লক্ষ্যে প্রতিদিন ঢাকা মহানগরে স্কাউটসহ একহাজার স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক পুলিশের সাথে কাজ করবে।

এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে আরম্ভ হয়ে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।

ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ মোঃ ময়নুল ইসলাম, এনডিসি। এছাড়াও ডিএমপির বিভিন্ন পদ মর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি সদস্য, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন