বৈশ্বিক ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে থাকলেও হামলার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তবে দেশে কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখন পর্যন্ত তাদের কাছে নেই।
শনিবার মিন্টু রোডে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মনিরুল এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে হামলার বিষয়ে আইএস হুঁশিয়ারি দেয় বলে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়। তারপরই সিটিটিসি প্রধানের এ বক্তব্য এলো।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সারা বিশ্ব এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরাও ঝুঁকিতে আছি। তবে বৈশ্বিক ঝুঁকির কারণে আমাদের দেশ ঝুঁকিতে থাকলেও কোনো হামলার আশঙ্কা নেই। আমাদের দেশে কোনো হুমকি বা হামলার কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই।’
মনিরুল বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে হামলার পর আমাদের দেশের জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে একটি প্রতিশোধপরায়ণ প্রবণতা জেগে উঠেছে। আমাদের বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির মাধ্যমে কিছু তথ্য পেয়েছি। তবে হামলার জন্য যে পরিমাণ সরঞ্জামের প্রয়োজন সেগুলো জোগাড় করা অনেক সময়ের ব্যাপার।’
বিভিন্ন অভিযানে তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা অনেকটা ভেঙে গেছে মন্তব্য করে ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘তবে শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনার পর থেকে নিঃসন্দেহে তারা ইন্সপায়ার্ড হয়েছে। যদিও হামলা করার জন্য সাংগঠনিক কাঠামো, মনোবল, সরঞ্জাম তাদের নেই। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার আশঙ্কাও নেই।’
‘শ্রীলঙ্কা ফেরত ১১ শ্রমিকের কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই’
শ্রীলঙ্কা হামলার পর দেশটি থেকে ফেরত আসা ১১ বাংলাদেশি শ্রমিকের কারও বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড পাওয়া যায়নি বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।
মনিরুল বলেন, ‘তবে তাদের বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা জেনেছি এই হামলা ও ফ্যাক্টরির মালিকের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাদের এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত তারা হামলার সম্পর্কেও কোনো তথ্যও দিতে পারেনি।’
‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কার হামলা ও হামলাকারীর সঙ্গে এই ১১ শ্রমিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা সেখানে ইব্রাহিম ইনসাফ আহমেদের কলসাস মেটাল নামে একটি পিতলের কারখানায় পিতলের তৈজসপত্র তৈরির কাজ করতো।’
এই শ্রমিকদের বেশিরভাগ টাঙ্গাইলের বাসিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা মূলত টুরিস্ট ভিসায় সেখানে গিয়েছিল। তাদের কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছিল না। অনেকের আবার ভিসার মেয়াদও ছিল না। হামলার ঘটনায় ওই ফ্যাক্টরির মালিক নিহত হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ তাদের এম্বাসির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। সেখানে অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা ছিল। তাদেরও ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
মনিরুল বলেন, ‘আমরা এই ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যে সন্ত্রাসী মারা গেছে আমরা তার সম্পর্কে এবং তার আত্মীয়দের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিছুই জানাতে পারেনি। তারা মালিককে দুই-চারবার দূর থেকে দেখেছে। তবে মালিকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ হয়নি। সাধারণ লেবারের মতোই তারা ছিল।’
গত রবিবার ইস্টার সানডের পরবের দিন শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও কয়েকটি তারকামানের হোটেলে একযোগে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় ২৫৩ জনের প্রাণহানি হয়। ঘটনার দুইদিন পর হমালার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। নিহতদের মধ্যে জায়ান চৌধুরী নামে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের নাতিও রয়েছে। আর আহত জায়ানের বাবা মশিউর হক চৌধুরী প্রিন্স বর্তমানে কলম্বোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
-ঢাকা টাইম্স টুয়েন্টিফোর ডটকম।