সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশ পুলিশকে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত ও প্রচারিত এ সংবাদের প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন-এর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে, গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কেএম নুরুল হুদার সাথে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের এক পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে – “আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। ”- বলেন মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে যা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। এ ধরণের আপত্তিকর, অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মতো জননিরাপত্তা ও জন-শৃঙ্খলা বিধানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনকারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবার মতো অপপ্রয়াস নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করেছিল বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্যরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে প্রথম যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে। জাতির যে কোন ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বিলিয়ে দিতেও কখনো পিছপা হয়নি। তাই ড. কামাল হোসেন-এর মতো মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকের নিকট হতে এ ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য জাতির মনে ভিন্ন চিন্তার উদ্রেক করে।
বাংলাদেশ পুলিশের ২ লক্ষ সদস্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন ও উদঘাটনে বদ্ধপরিকর। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাঙ্খিত পর্যায়ে রয়েছে। সৃষ্ট নিরাপত্তা বলয়ে নিয়মিত সংঘটিত হচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামিট, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। জঙ্গী কার্যক্রম, সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অপরাধ সুচারুরূপে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেশব্যাপী জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২৭ জন সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ নিরাপদ পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বত্র আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের উপর অর্পিত হয়েছে। নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচন সামগ্রী প্রেরণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার সদস্য দেশব্যাপী নিয়োজিত হয়েছে। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশ পুলিশকে “জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী” হিসেবে আখ্যায়িত করা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। তাই অনাকাংখিত বক্তব্যের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবলে আঘাত হেনে বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টির যে কোন ধরণের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
তার এই বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আপত্তিকর ও অবিবেচনাপ্রসূত। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সূত্র: ডিএমপি নিউজ।