তোমার বাবাকে আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তিনি আমাদের জিম্মায় ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে আছেন। আমাদের টাকা দিলে তোমার বাবাকে ছেড়ে দেব।’ এভাবেই ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমানের ছেলেকে ফোন দেয় একটি চক্র। পরে তাকে উপর্যুপরি মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার একটি ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা না পেলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রটি।

এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- রিপন সরদার, আহমেদুল কবির খান কাজল, মোসলেম উদ্দিন বাপ্পি, মোহাম্মদ আসলাম ও রশিদ চাকলাদার। তাদের কাছ থেকে দুটি ডিবি জ্যাকেট, দুটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, ১১টি মোবাইল ফোন, একটি প্রাইভেটকার ও নগদ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশভূষা ধারণ করে এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা ও খুনসহ নানা অপরাধ করছিল। নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে ডিবির জ্যাকেটের মতো জ্যাকেট ব্যবহার, ওয়াকিটকি ও অস্ত্র বহন করত। এছাড়া নিজেদের ডিবি পুলিশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ডিবির স্টিকার তৈরি করে তা মাইক্রোবাস বা বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহার করছিল।

গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় পিস্তলসহ লুৎফর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছয়-সাতজন জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে ওঠানোর পর লুৎফর রহমানের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এসময় তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে গাড়ির ভেতরে ওই ব্যবসায়ীকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে লুৎফরকে বলা হয়- ‘তোকে মুন্সীগঞ্জ বিলে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসেছি, আমাদেরকে ১০ লাখ টাকা না দিলে তোকে জানে মেরে ফেলব।’

ভুক্তভাগী তাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান। পরদিন রাতে (২৬ নভেম্বর) অপহৃত ব্যবসায়ীকে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ফোন করে তার ছেলেকে বলা হয়- ‘তোমার বাবাকে আমরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটক করেছি। বর্তমানে তোমার বাবা আমাদের ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে আছে। আমাদেরকে টাকা দিলে আমরা তোমার বাবাকে ছেড়ে দেব।’

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল বলেন, ‘জিম্মি ব্যবসায়ী লুৎফরকে গ্রেপ্তার মোসলেম উদ্দিন বাপ্পির বাসায় নিয়ে উপুর্যপুরি মারধরসহ বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এসময় পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভূক্তভোগীর ছেলে বিকাশ ও নগদের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এক লাখ টাকা পাঠান। পরে আরও টাকার জন্য পুনরায় চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারকে পাঠানো হয়। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে তাকে (লুৎফর) মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।’

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পাশাপাশি র‌্যাব-১-কে বিষয়টি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা একটি অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। পরস্পর যোগসাজশে ডিবি পরিচয়ে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি, শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম আছে। এগুলো বাইরের সাধারণ কারও কাছে বিক্রি করা নিষেধ। এসব নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে আমরা অবশ্যই যোগাযোগ করব, যাতে এগুলো বিক্রি বন্ধ হয়। আশা করছি, এগুলো বন্ধের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ আছে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন