নদী তীর পুনর্দখলের চেষ্টা করবেননা —–স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।।
রাষ্ট্র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে নদীগুলো বেদখল হয়েছে.. নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।।
নদী তীর পুনর্দখলরোধে নদীর তীরভূমিতে সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে, কিওয়াল, ওয়াকওয়ে অন পাইল ইত্যাদি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। উক্ত কাজ বাস্তবায়নে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধিন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। নদীর তীরভূমির অবৈধ দখলরোধ, দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পরিবেশগত উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা) নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
আজ (৬ জুলাই ২০১৯) ঢাকার কামরাঙ্গিরচরস্থ খোলামোড়া ঘাটে সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে, নদী তীর রক্ষায় (কিওয়াল), ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এম.পি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুস সামাদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও পরিবেশবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাবুবব উল ইসলাম এবং প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম পর্যায়ে (৬ জুলাই থেকে) ঢাকা নদী বন্দর এলাকায় ৩,৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার, রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কিওয়াল, দু’ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ/স্থাপন করা হবে। ৩,৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলারের মধ্যে ২,৩৪০টি সিঙ্গেল পাইলের এবং ১,৪৬৩ টি ডাবল পাইলের হবে। ৩,৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর স্থাপনার কাজ শেষ হবে। রামচন্দ্রপুর হতে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল হতে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কিওয়াল এবং দু’ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে অন পাইল নির্মাণ/স্থাপনে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এগুলোর স্থাপনার কাজ শেষ হবে।
উল্লেখ্য, বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পের আওতায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে, কিওয়ালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করবে। নদীর তীরভূমিতে ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নদীর তীরভূমিতে পাইলের ওপর ১২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১০,৮২০ টি সীমানা পিলার স্থাপন, তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ, দু’টি পর্যটন বান্ধব দৃষ্টিনন্দন পার্ক, ১৯টি আরসিসি জেটি, ১০০টি আরসিসি সিঁড়ি, ৪০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা (কিওয়াল) সহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদী দখলমুক্ত করে বাংলাদেশের নদীমাতৃক রুপ তুলে ধরা হবে। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নদী তীর পুনর্দখলের চেষ্টা করবেননা। দখল করার চেষ্টা করলে ভুল করবেন। দখলকােিদর আইনের আওতায় আনা হবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুড়িগঙ্গাকে পুরানো রুপে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর সে নির্দেশনা অনুযায়ি আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশে সার্কুলার নৌপথ চালু করে যাত্রি ও মালামাল পরিবহন সহজতর করা হবে। বুড়িগঙ্গাকে হাতিরঝিলের ন্যায় নয়নাভিরাম করা হবে, বছর খানেকের মধ্যে এ দৃশ্য দেখা যাবে। বুড়িগঙ্গা হবে আনন্দ ও বিনোদনের কেন্দ্র।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগি করতে চাই। মানুষের জীবিকার জন্য নদী ব্যবহৃত হবে-আমরা সেরকম পরিবেশ গড়ে তুলব। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে সরকার কাজ করছে। এক্ষেত্রে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। তিনি নদী রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্র কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে নদীগুলো বেদখল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তৎকালিন সরকারগুলো শুধু নদী দখল করেনি, তারা আমাদের পরিচয়ও বেদখল করার চেষ্টা করেছে। নদী আমাদের ঠিকানা; সে ঠিকানাও পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নদী রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নদী রক্ষায় শুধু ঢাকার মানুষ নয়; সারাদেশের মানুষ এগিয়ে এসেছে।