এসএম শহীদুল ইসলাম: হেমন্তের প্রত্যেকটি বিকেল জমে উঠতো সাহিত্য আড্ডায়। সেই আড্ডার আসর শেষ হচ্ছে আজ। অপেক্ষা বাড়লো আরও একটি বছরের। আবার আসবে বইমেলা। কিন্তু আজ যে বিদায় বেলায় এখানেই থামতে হচ্ছে। মন খারাপের পদচিন্থ রেখেই যে আজ ঘরে ফিরতে হবে। ১০দিনব্যাপী চলা প্রাণের উৎসব বইমেলার শেষ দিনে অনেকেই এসব ভেবে আবেগাপ্লুত হয়েছেন। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে ধীর লয়ে বিদায় নিয়েছেন হাজারো লেখক-পাঠক-ভক্ত-অনুরাগীগণ। তাদের চোখে এখন আগামী বইমেলার অপেক্ষা।
সময়ের আবর্তনের নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে শেষ হচ্ছে শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের প্রাণের উৎসব বইমেলা। সমাপনী দিনে বইমেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসা বইপ্রেমীদের আবেগের হিল্লোল উপচে পড়বে মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে। এদিন অনেকেই আবার পরের বছরে বইমেলার প্রতীক্ষায় দিন গুনার জন্য প্রস্তুত হলেও কেউ কেউ মন খারাপ করেই ঘরে ফিরবেন। নান্দনিক আয়োজন ও ভিন্নতা নিয়ে শেষ হচ্ছে বইয়ের মেলা।

সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সুবর্ণ জয়ন্তী ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এ বইমেলার বর্ণিল পর্দা উঠেছিলো ১৬ নভেম্বর। এবারের বইমেলার প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছিল একটু আগেভাগেই।

‘বই দেখাবে আলোর পথ, গড়বো নতুন ভবিষ্যত’ এই স্লোগানে সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরির ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বইমেলার উদ্বোধন করা হয়েছিলো। সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে ১৬ নভেম্বর এ বইমেলার উদ্বোধন করা হয়।

মেলায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য আ. আ. ম. স আরেফিন সিদ্দিক। সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) আবদুল মান্নান ইলিয়াস, যুগ্ম-সচিব (সংসদ ও আইন) মো. শওকত আলী, যুগ্ম-সচিব ফয়েজুর রহমান ফারুকী, রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট (যুগ্ম-সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, সাবেক মেয়র এমএ জলিল, পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক রাসেল কামরুজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী, পাবলিক লাইব্রেরির কার্যনির্বাহী সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতিসহ সুধীজন।

১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয় বইমেলা। আজ ২৫ নভেম্বর মেস হচ্ছে মেলা। এবারের বই মেলায় মোট ৬৮টি স্টল স্থান পায়। ঢাকা থেকে ৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরসহ ৩২টি খ্যাতনামা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।

মেলায় ১৮ নভেম্বর ও ২২ নভেম্বর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২০০ টাকার বই কিনলে কুপন দেওয়া হয়। আজ মেলার শেষ দিন র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। মেলার উদ্বোধনী দিন থেকেই স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়।
প্রধান আলোচকের উপস্থিতি বইমেলার সৌন্দর্য ও গাম্ভীর্যকে ভিন্নতর মাত্রা দান করে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকরা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবকে কেন্দ্র করে এই বইমেলা আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সহায়ক হয়েছে। এবার বাংলা একাডেমি ও অন্যান্য প্রকাশনী মিলে মিলে রেকর্ড সংখ্যক স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের পুরো অঙ্গন জুড়ে ছিলো বইমেলার স্টল।

মেলায় শিশুদের চিত্ত-বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। শিশু-কিশোরদের জন্য বাংলা একাডেমি সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা, সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। শিশুরা তাদের অভিভাকদের সঙ্গে মেলায় এসেছে, আনন্দ করেছে এবং ইচ্ছামতো বই কিনেছে। শিশুদের আগমণে প্রতিদিন আমাদের মেলা নতুন প্রাণে জেগে উঠতো। মেলায় অষ্টম দিনে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকতের উপস্থাপনায় কুইজ প্রতিযোগিতায় মেলে ধরেছিলেন অবারিত তথ্যের ভান্ডার। নবম দিনে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সার্বিক সহযোগিতায় মেলার প্রকাশকদের নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ ছিলো নতুন মাত্রা। লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে যেনো উঠেছিলো আনন্দ বন্যা।
দেশের খ্যাতনামা প্রবীণ ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সাহিত্যিকেরা এতে অংশ নেন। বিভিন্ন পর্বে আলোচনা, প্রবন্ধ পাঠ ও স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রখ্যাত শিল্পীরা নৃত্য-গীত-সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সব মিলে একটি অপূর্ব সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আবহ তৈরি হয়েছিলো এবারের বইমেলায়। এবার আঙ্গিক সৌন্দর্য ও সামগ্রিক পরিকল্পনায় কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়। নতুন বই প্রদর্শনের জন্য এবার নতুন বইয়ের স্টল বানানো হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে মঞ্চের পশ্চিমপাশে স্টল দেওয়া হয়। স্টলটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নামাজের স্থান, তথ্যকেন্দ্র, সম্প্রচার মঞ্চ, নিরাপত্তা, মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেলায় আগত লেখক, প্রকাশক এবং আগ্রহী পাঠক-ক্রেতা-দর্শণার্থীদের সেবা দিয়েছে। গুণীজনদের বিচারে বইমেলায় পুরস্কার প্রদান করা হবে। এবারের বইমেলা সুপরিসরে সুন্দরভাবে বিন্যস্ত হয়েছে বলে প্রায় সবাই প্রশংসা করেছেন। বইমেলায় বই বিক্রিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন