ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এ দেশের পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করেছে, শাহাদাতবরণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সেই থেকে শুরু করে প্রতি বছর মানুষের সেবা করার জন্য, নিরাপত্তার জন্য, এ দেশের শৃংখলার জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য আত্মোৎসর্গ করছেন।

তিনি বলেন, করোনাকালে গত দুই বছরে দেশমাতৃকার সেবায় ১০৬ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাত হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সুস্থ হয়ে আবার দেশের সেবা, জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছেন।

আইজিপি আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ চত্বরে নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন পুলিশ মেমোরিয়াল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও স্থপতিগণ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

আইজিপি বলেন, দেশে যখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে তখন ডিফেন্স ফোর্স দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে থাকে। আর শান্তিকালীন সময়ে সব সময় যুদ্ধে নিয়োজিত থাকে পুলিশ। এ যুদ্ধ যারা সমাজ ও রাষ্ট্র ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয় তাদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, যেখানে যুদ্ধ সেখানে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়, প্রাণহানি ঘটে। বিশ্বব্যাপী পুলিশের ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর আমরা আমাদের সহকর্মীদের হারাই। তারা শাহাদাতবরণ করেন দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা জন্য, জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য।

আইজিপি বলেন, যখন আমাদের একজন পুলিশ সদস্য আত্মাহুতি দেন, তখন আমরা শুধু একটি মুখচ্ছবিকে হারাই না। আমরা আমাদের একজন সহকর্মী, সহযোদ্ধা, সাথী, বন্ধুকে হারাই। এটা হলো আমাদের দিক। আবার একই সাথে পরিবার হারায় তার প্রিয় মানুষকে। বাবা তার সন্তান, স্ত্রী তার স্বামী, সন্তান তার বাবা অথবা মাকে হারায়। এটার একটা বহুমাত্রিক ক্যানভাস রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রিয়জন হারানো পরিবারের প্রতি আমাদের সান্তনার কোনো ভাষা নেই। আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমাদের সকল মমত্ববোধ দিয়ে সবসময় তাদের স্মরণ করি।

পুলিশ মেমোরিয়াল নির্মাণের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আজ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি তাৎপর্যময় গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা আজ বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের জন্য, তার সদস্যদের জন্য একটি মেমোরিয়াল উদ্বোধন করলাম। আমরা প্রতিবছর পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন করি। গত ২০১৭ সাল থেকে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন করে আসছি। আমরা ২০১০ সাল থেকে এ ধরনের মেমোরিয়াল স্থাপনের জন্য চেষ্টা করে আসছি। ১২ বছর পর এ উদ্যোগ আজ সফল হয়েছে। তিনি এ প্রচেষ্টার সাথে জড়িত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এ মেমোরিয়ালের নিচে জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের নানা তথ্য সম্বলিত আর্কাইভ রয়েছে, প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি উদ্যোগ অনুমোদন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আইজিপি।

এর আগে পুলিশ মেমোরিয়ালের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ-১) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম এবং এআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ-২) এ. জেড. এম. মোস্তাফিজুর রহমান।

বিভিন্ন দেশের স্মৃতিস্তম্ভ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ পুলিশ ২০১০ সালে স্থায়ী দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশসমূহের স্মৃতিস্তম্ভ হতে স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে এটি একটি অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ। এর প্রাথমিক নকশাকার স্থপতি মোঃ কামরুল হাসান তন্ময়। ডিটেইল নকশাকার স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি নওয়াজীশ মাহবুব। ইন্টেরিয়র নকশার স্থপতি ফারিবা সামিয়া অমি।

অনন্য স্থাপত্য নকশায় নির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালের বেদীর মোট আয়তন ২৮ হাজার ৩শ’ বর্গফুট। বেদীর মাঝখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরের সম্মুখযোদ্ধা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ৭১ এর অনুসরণে টাওয়ারের উচ্চতা ৭১ ফুট করা হয়েছে। রাতের বেলায় টাওয়ার হতে বিকিরিত আলো বীর শহীদদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পুলিশ মেমোরিয়ালে নান্দনিক লাইট সম্বলিত টাওয়ার ৭১, সুবিশাল প্লাজা, সীমানা প্রাচীর ও গেইট, আধুনিক গ্যালারি ও সাউন্ড সিস্টেম, থিয়েটার হল, ডিজিটাল আর্কাইভ ইত্যাদি সুবিধাদি রয়েছে। এর আন্ডারগ্রাউন্ডে ১৯৯৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পুলিশে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের ডাটা সংরক্ষিত রয়েছে।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন