পুলিশের এলিট ফোর্সের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুরান ঢাকা ঐতিহ্যের। এই এলাকা হতে পারে বিশ্বের সেরা ঐতিহ্যের নগরী। কিন্তু কেমিক্যালের কারণে একসময় পুরান ঢাকা রূপ নিয়েছিল টাইম বোমায়। যে কারণে পর পর দুটি বড় দুর্ঘটনা ঘটল। সরকার চায় এই এলাকায় আর দাহ্য পদার্থের ব্যবসা না হোক। তাই টাস্কফোর্সের উদ্যোগে সরানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাচ্ছেন, কেউ কেউ এসব নিজের বাসায়-আত্মীয়ের বাসায় রাখছেন। পুরান ঢাকাকে সেফ করতে গিয়ে দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে পুরো ঢাকাকে তারা যেন টাইম বোমায় পরিণত না করেন।
শনিবার রাজধানীর বকশীবাজার কারা কনভেনশন হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা হতে কেমিক্যাল, পস্নাস্টিক ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থের কারখানা ও গোডাউন অপসারণের লক্ষ্যে বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে (র্যাব)-১০।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ও টাস্কফোর্স উপ-কমিটি-৪ এর আহ্বায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাইয়ুমুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, টাস্কফোর্স সদরের প্রতিনিধি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেরর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ডিএমপির লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা আর গরীব দেশ নই। আমাদের গরীবি আছে মনে। সেটা দূর করতে হবে। আমাদের এখন পার ইনকাম (জনপ্রতি আয়) দুই হাজার ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা হবো মধ্যম আয়ের দেশ। আমাদের চ্যালেঞ্জ নেবার ক্ষমতা আছে। সেটা গ্রহণ করতে হবে।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘পুরান ঢাকায় মজুত রেখে ব্যবসা হয় এমন ৩৫টি আইটেমের কেমিক্যালকে শনাক্ত করা হয়েছে। যেগুলো দাহ্য পদার্থ হিসেবে সরানোর কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে হবে।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘আপনারার যারা ব্যবসায়ী তাদের জ্ঞান দেয়ার কাজ আমাদের না। আমরা তো পেমেন্ট দিয়ে কিনি। তবে কেন মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য আমদানি করব। আমরা যা যা যেভাবে চাইব সেটা দিতে বাধ্য রপ্তানিকারকরা। ডাম্পিংয়ের দেশ আর বাংলাদেশ না। এসব বন্ধ করতে হবে। কারণ আমাদের কথা বলার ক্ষমতা আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম বাজেট বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন ৭৩৫ কোটি টাকা। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাজেট ঘোষণা করেছেন ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এটা আরও বাড়বে। সুতরাং আমাদের চিন্তার প্রসার আনতে হবে। আমরা সামনে ৩০তম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ হব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা দাহ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে অভিনন্দন। আমরা কারও প্রতিপক্ষ না। আজকে দেশ এই জায়গায় এসেছে আপনাদের (ব্যবসায়ী) জন্য। আমরা প্রশাসন, পলিটিশিয়ান, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই কাজ করি আপনাদের জন্য।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, অভিযান বন্ধ করতে হবে। কিন্তু আইন অমান্য করব? আইন মানলে তো অভিযান চালাতেই হবে। তবে আপনাদের আমি আশ্বস্ত করছি অন্যায়ভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আমরা এমন কিছু করব না।’
বেনজীর বলেন, ‘সমস্যা দুই দিক থেকেই। রাখার জায়গা না থাকলে আপনারা কেমিক্যাল নিয়ে কোথায় যাবেন? কিন্তু এটা রাখতে গিয়ে যদি সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে ফেলেন তাহলে, পুরান ঢাকা ছিল একসময় টাইম বোমা। সেই কেমিক্যাল ছড়ালে পুরো ঢাকা শহর টাইম বোমায় পরিণত হবে। সেটা করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী বললেন দেড়শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা। এসব প্রকল্পে কিছু হবে না। একনেকে পাস হবে, টাকা ছাড় হবে। বাস্তবায়নে আরও দুই বছর। এসব করতে করতে দেরি। আমাদের তো দরকার এখনই। আমি শিল্প মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, পুরান ঢাকা কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির যে ল্যান্ড আছে সেটা ভাড়া নেন। আমাদের যারা ব্যবসায়ী তারা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এটা করলে দুই মাসের মধ্যেই সাময়িক সমস্যার সমাধান হবে।’
বেনজীর আরও বলেন, ‘আমরা আফসোস করছি নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জমি পাচ্ছি। সেটা বন্দোবস্ত করুন। ম্যাচ ফ্যাক্টরির জমি ভাড়া নেন। এক শ’ দেড় শ’ একর নেন। ব্যবসায়ী ভাইকের বিপাকে ফেলানো আমাদের কাজ না। তাদের ব্যবসার নিরাপদ জোন করা সম্ভব। কিন্তু এই পুরান ঢাকা আমাদের ছাড়তে হবে।’
এর আগে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাদের অভিযোগ অনুযোগ ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন।