নির্মোহতার নজির গড়লেন পুলিশের মহাপরির্দশক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) । দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া সংস্থা কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতির পদ পেয়েও নেননি তিনি। পদাধিকার বলে এই পদ তাঁর অলঙ্কৃত কথা থাকলেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালক থাকতেই বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। শুধু তাই নয়, নবগঠিত দক্ষিণ এশিয়ান দাবা কাউন্সিলরেরও প্রথম সভাপতি ড. বেনজীর আহমেদ। দুটো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে থাকায় নতুন করে কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি পদটিতে বসতে চাননি তিনি।

ওদিকে আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থাও (ফিদে) চায় বেনজীর আহমেদের মতো একজন দক্ষ প্রশাসক থাকুক দাবা ফেডারেশনে। তিনি নিজেও সাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন দাবার সঙ্গে।

অতীতে যারা পুলিশের আইজিপি হয়েছেন রেওয়াজ অনুযায়ী তারাই কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতির পদটি অলঙ্কৃত করেছেন। এ ক্ষেত্রে নির্মোহতার নজির গড়েছেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

এদিকে দাবা ফেডারেশনের আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন অ্যাডহক কমিটি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যেখানে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আগের নেতৃত্বস্থানীয়রাই থাকছেন। সহসভাপতি হিসেবে থাকছেন চার জন, আর যুগ্ম সম্পাদক দুই এবং কোষাধ্যক্ষ পদে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কার্যনির্বাহী বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন ১৭ জন।

এ বছরের গত ৮ এপ্রিল নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান ড. বেনজীর আহমেদ। ১৫ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন তিনি। এর আগে তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাকে র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রেও অবদান রাখেন বেনজীর।

হলি আর্টিজান হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ অভিযাত্রাকে একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিয়ে বেগবান রেখেছেন মাদকবিরোধী অভিযান। সুন্দরবনের জলদস্যুতার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বস্তির উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। সাম্প্রতিক ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান তার সাফল্যের মুকুটে আরও একটি উজ্জ্বল পালক।

বাংলাদেশ পুলিশে বেনজীর আহমেদ মেধাবী, সৎ ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরের বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন।

সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। বেনজীর আহমেদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। র‌্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ছয় বছরের বেশি। তার আগে তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় একটি নির্দিষ্ট জেলার জন্য তার পদোন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ ছিল।

এ ছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, ডিএমপিতে ডিসি নর্থ, পুলিশ একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার টাঙ্গাইলের কমান্ড্যান্ট, ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বিভাগে চিফ অব মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কর্মদক্ষতায় তিনবার জাতিসঙ্ঘ শান্তিপদক অর্জন করেন।

পুলিশের সর্বোচ্চ পদক লাভ

চাকরিজীবনে সব সময় দায়িত্ববান ছিলেন বেনজীর আহমেদ। এজন্য অর্জন করেছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। ২০২০ সালে ষষ্ঠ বারের মতো বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (সাহসিকতা) অর্জনের রেকর্ড গড়েন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে পদক পেয়েছিলেন।

ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন

২০১৯ সালে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘কনট্রিবিউশন অব বাংলাদেশ ইউএন পিস কিপিং ফোর্স টু আওয়ার ন্যাশনাল ইকোনমি’ শিরোনামে তার অভিসন্দর্ভে জাতীয় অর্থনীতিতে পুলিশ শান্তিরক্ষীদের অবদান এবং শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় তিন দশক দায়িত্ব পালনে লব্ধ অভিজ্ঞতা দেশের পুলিশ বাহিনী সংগঠনে ইতিবাচক পরিবর্তনে কী ধরনের ভূমিকা পালন করেছে তা তুলে আনেন বেনজীর আহমেদ। গবেষণায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনন্য অবদান রাখার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান

গতবছরের ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন বেনজীর আহমেদ। সার্ক অঞ্চলের এই আট দেশের দাবা কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এরপর শতশত দাবাড়ু তৈরি করতে কাজ শুরু করেন তিনি। তার উদ্যোগে দক্ষিণ এশীয় আট দেশ নিয়ে ঢাকায় হয় ‘ফার্স্ট সার্ক চেজ চ্যাম্পিয়ন’ প্রতিযোগিতা। ‘বাংলাদেশ স্কুল দাবা টুর্নামেন্টের’ জন্য বেনজীর আহমেদের আহ্বানে স্পন্সর হয় আবুল খায়ের গ্রুপ।

ক্যাসিনো অভিযান

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী ক্যাসিনো অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে সরকার দলীয় বাঘাবাঘা রাজনীতি নেতা-নেত্রী, ঠিকাদার, ক্রীড়া সংগঠকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ধরা পড়ে। উদ্ধার হয় নগদ টাকা, হাজার হাজার ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ক্যাসিনো সরঞ্জাম। এসব অভিযানের নেতৃত্ব স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবকে দেন। তার নেতৃত্বে সততার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

সংবাদ ঢাকা টাইম্স টুয়েন্টিফোর ডটকম এর।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন