দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে যশোরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যশোরের জনসভায় উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুয়োগ দেবেন কি না ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।
এসময় সমাবেশে উপস্থিত জনতার কাছ থেকে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা আদায় করেন শেখ হাসিনা। জনতা দুই হাত তুলে ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তব্যকালে তিনি একথা বলেন। বিকাল তিনটার কিছু সময় আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন।
বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করতে মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বিএনপির কাজই হচ্ছে গুজব ছড়ানো। তাই আপনার গুজবে কান দেবেন না।’
রিজার্ভ এখনো পর্যাপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে যেটুকু খরচ হয়েছে, তা মানুষের উন্নয়নেই খরচ হয়েছে। আমি দেখি, কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নাই।’
রিজার্ভ নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জানতে চান রিজার্ভ কোথায় গেলো, তাদের বলছি, রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, দাম বেড়েছে সবকিছুর। তারপরও আমরা খরচ করছি, আমদানি করছি; যাতে দেশের মানুষের খাদ্যের যেন ঘাটতি না হয়। কারও কোনও ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়।’
জমি অনাবাদী না রাখার বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ জন্য সব মানুষকে বলে দিয়েছি, কোনও জমি যাতে খালি রাখা না হয়। পারলে একটা মরিচ গাছ লাগান, একটি টমেটো গাছ লাগান। এটি আমাদের সবার উপকারে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলে ব্যাংকে টাকা নাই। ব্যাংকে টাকা নেই এ কথাটা মিথ্যা। বুধবারও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ মিটিং করেছি। আমাদের এ বিষয়ে কোনো সমস্যা নাই। ব্যাংকগুলোতে যথেষ্ট টাকা আছে।’
গুজবের বশবর্তী হয়ে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে ব্যাংকে টাকা নেই শুনে টাকা তুলে ফেলছে। এতে সে আরও বিপদে পড়তে পারে। ব্যাংকের টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চুরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চোরের জন্য সুযোগ করে দেওয়া।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আজকে সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা অর্থনীতিকে এখনো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগেকে আমার দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সমাবেশের উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সেবা করার সুযোগ চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পাশে থাকতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, আমরা উন্নতি চাই। প্রত্যেকটা জায়গায় দেশ এগিয়ে যাক, সেটিই প্রত্যাশা। যতদিন বেঁচে আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাব।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, মির্জা আযম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন, ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। জনসভার সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন প্রারম্ভিক বক্তব্য দিয়ে জনসভা শুরু করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে দুপুর ১২টার মধ্যে জনসভা স্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসভা স্থল পেরিয়ে আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। পুরো শহর উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্লোগানে স্লোগানে ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায় লাখো জনতা।