নিজস্ব প্রতিবেদকঃ লেখাটি আমার নয়।লেখাটি পাবনা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব জিহাদুল কবির সাহেবের।অনেকটা আবেগ,ঘৃনা,রাগ ও হৃদয়ের অনুভুতি দিয়ে এক নিঃষ্পাপ দুধের বাচ্চার খুনের ঘটনায় আসামীর ভয়াবহ জবানবন্ধী শুনে হতবাক হয়ে স্টাটাস দিয়েছেন পাবনার পুলিশ সুপার জনাব Jehadul kobir.নিচে সেই স্টাটাস টি হুবাহু তুলে ধরা হলঃ
গল করে রক্ত বের হচ্ছে নাক দিয়ে। আড়ষ্ট জিহ্বাটা নড়ল একটুখানি, কিন্তু কোন আওয়াজ বের হল না, তবে মায়া ভরা দু’টো চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অভিমানের অশ্রু। কিছুই বুঝল না ক্লাশ ওয়ানে পড়–য়া দুধের শিশু আনিস। শুধু দেখল তার আপন চাচী শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে আর তার ভাইগুলি জল্লাদের মত গলা টিপে ধরেছে তার। এরপর থেমে গেল পৃথিবীর সব কোলাহল।সভ্য পৃথিবীর অসভ্য দংশনে বুক ভরা অভিমান নিয়ে চিরতরে চলে গেল ছোট্ট শিশু আনিস।
আজ লিখতে মন চাইছে না। লজ্জা, ঘৃণা আর ক্ষোভে স্তব্ধ হয়ে গেছি। আপন চাচী হত্যা করল দুধের শিশুকে। এও কি পারে মানুষ! কিভাবে পারল এই নারকীয় বর্বর কাজ করতে? তবে, শুনুন পুরো ঘটনা।
ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা জেলার আমিনপুর থানারখয়েরকান্দি (ঢালারচর) গ্রামে। পাঁচ বছর আগে লাভলীর বিয়ে হয় একই গ্রামের সাইফুলের সাথে। কিন্তু, বনিবনা না হওয়ায় বছর তিনেক হল বাপের বাড়িতেই থাকে সে।গত বছর সাইফুল এলাকাতে নিয়ে আসে একটা মেয়ে কে বিয়ে করার জন্য। জানতে পেরে লাভলীর ভায়েরা মারধর করে সাইফুলকে এবং সালিশির মাধ্যমে সাইফুলকে ১০০০০০০ টাকা জরিমানা করে। সাইফুল এদিকে না দেয় টাকা না নেয় লাভলীকে ঘরে তুলে। এদিকে ভাই ভাতিজাদের নিয়ে দিব্বি সুখে রয়েছে সাইফুল। বেশ আনন্দেই কাটছে দিন। এই দৃশ্য লাভলী আর তার পরিবারের সহ্য হল না। পিশাচ ভর করল তাদের ঘাড়ে। প্রতিশোধের নেশা পেয়ে বসল।তারা ঠিক করলো সাইফুলের পরিবারের ক্ষতি করবে। অমনি পরিকল্পনার ছক এঁটে ফেলল তারা।
সাইফুলের বড় ভাইয়ের শিশু বাচ্চাকে টার্গেট করা হল।২০/১১/১৭ তারিখে আনিসকে খাজা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে স্কুল থেকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে লাভলী। চাচীকে নিজের মায়ের মতই বিশ্বাস করতো আনিস। তাই সাত পাঁচ না ভেবে খুশি মনে চলে আসে চাচীর সাথে। লাভলীর কোলে বসেই ভাত খায় সে। পিশাচ লাভলী ভাতের সাথে কড়া ঘুমের অষুধ মিশিয়ে দেয়। গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে দুরন্ত বাচ্চাটি। লাভলী নিজের বাড়িতেই লুকিয়ে রাখে বাচ্চাটিকে। দেখতে থাকে এরপর কি ঘটে।এদিকে আনিস ঘরে ফেরেনি দেখে পাগলের মত খোঁজাখুঁজি শুরু করে আনিসের বাবা-মা। ধীরে ধীরে রাত নেমে আসে। এরই মধ্যে শোনা যায় লাভলীর সাথে নাকি আনিসকে দেখেছিল কেউ কেউ। বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করে লাভলী ও তার পরিবার। মাঝে একটি দিন কেটে যায়। তবুও ঘুম ভাঙে না শিশুটির।এরপর ২১/১১/১৭ তারিখ গভীর রাতে ঘটে এক নির্মম ঘটনা। ঘুমন্ত আনিসের হাত চেপে ধরে লাভলী। তাকে সাহায্য করে তার মা ও ভাবী। এরপর লাভলীর এক ভাই বুকের ওপর চড়ে বসে শিশু আনিসের। নোংরা আক্রোশে ঘুসি মেরে দুটি দাঁত ভেংগে ফেলে। অপর দুই ভাই সাথে থেকে লাভলীরই ওড়না পেঁচিয়ে এবং গলা টিপে হত্যা করে আনিসকে। এই নরপিশাচদের নারকীয়তা এখানেই শেষ হয়নি। এরপর ওড়না জড়িয়ে ছোট্ট দেহটি ফেলে আসে পার্শ্ববর্তী ডোবায়। এদিকে সন্তান শোকে পাগল বাবা-মা আর তার স্বজনেরা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে বাচ্চাটিকে। এরপর ২২/১১/১৭ তারিখ তারা গ্রামের ভিতরের এক ডোবায় আনিসের লাশ খুঁজে পায় । সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি লাভলীর। তাড়াহুড়োর সময় ভুল করে লাশের পাশেই সে ফেলে আসে তার ওড়না। এরই রেশ ধরে গ্রেপ্তার হয় সে। জিজ্ঞাসাবাসের এক পর্যায়ে আর লুকাতে পারে না তার অপকর্ম। অবশেষে বর্ণনা করে তার পাশবিকতার কথা।আদালতে জবানবন্দী দেয় লাভলী।
সুজানগর সার্কেল এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল, তদন্তকারী কম’কতা মঈন এবং আমিনপুর থানার সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেসটাতে উৎঘাটিত হয়েছে এই ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
যে শিশুটি এখনও মায়ের কোলই ছাড়েনি, মুখে তুলে না দিলে খেতে পারে না, রাতে মায়ের গলা না জড়িয়ে ধরলে ঘুমোতে পারেনা, তার গলায় ফাঁস পড়িয়েছে তারই মায়ের মত, তারই আপন চাচী। এর চেয়ে বিশ্বাসঘাতকতা, এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক আর কি হতে পারে! বলার ভাষা নেই। শুধু হাত জোড় করে শিশু আনিসকে বলতে চাই-বাবা আনিস, আমাদের ক্ষমা করো’।
সূত্রঃ Jehadul kobir.(Sp Pabna)