১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা।

সেদিন পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের হারানো এবং বোন শেখ রেহানাসহ নিজে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা মৃত্যু থেকে অনেক বেশি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেই ভয়াল স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করি এটা আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল। আমি দেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম দুটি বাচ্চাকে নিয়ে আর রেহানাকে (বোন শেখ রেহানা) সঙ্গে নিয়ে স্বামীর কর্মস্থলে। আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম, সেই বাঁচাটা বাঁচা না। সেই বাঁচার যন্ত্রণাটা মৃত্যু থেকে অনেক বেশি। ছয় বছর দেশে আসতে পারি নাই। অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়েছিল।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগের কাছে। আমাকে প্রথম যখন নির্বাচিত করল, আমি তখন গ্রহণ করতে পারি নাই। কাজ করেছি, থেমে থাকিনি। ’৭৯ সালে রেহানা প্রথম সভা করে প্রতিবাদ করেছিল সুইডেনে। সেই রাজনৈতিক সভা রেহানাই প্রথম শুরু করে। ’৮০ সালে আমি লন্ডন যাই। সেখানে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করি, এই হত্যার প্রতিবাদ করা শুরু করি।’

তিনি বলেন, একটা ইনকোয়ারি কমিশনও করি। কিন্তু সেই কমিশনের স্যার টমাস ইউলিয়ামস কিউসি এমপি, তিনি কুইন্স কাউন্সিলর ছিলেন, তাকে কিন্তু জিয়াউর রহমান ভিসা দেয়নি আসতে, তদন্ত করতে। আমাদের বাড়িতে যারাই ছিল সব কয়জন এই খুনের শিকার।

‘প্রথমে দেখাতে চেয়েছিল একটা পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি সেই বিজয়ের প্রতিশোধ নেয়া এবং সেই বিজয়কে ধূলিসাৎ করে দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের আবার পুনর্বাসিত করা, আবার পাকিস্তানি ভাবধারাদের নিয়ে আসাই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, যে কারণে এই খুনিরা এই হত্যার পরপর ঘোষণা দিয়েছিল ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’, যেটা পরিবর্তীতে আর তারা রাখতে সাহস পায় নাই। দুঃখের বিষয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা তো চেনা। বাংলাদেশ খুব ছোট জায়গা। দিনরাত আমাদের বাড়িতেই যারা ঘোরাঘুরি করত তারাই তো সেই খুনি রূপে আসল।

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান একজন মেজর ছিল, তাকে প্রমোশন দিয়ে দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছিল। বোধহয় মাসে একবার করে হলেও সে আমাদের বাসায় আসত। কখনও একা বা কখনও খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। কারণ খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসলে মার সঙ্গে দেখা করার উছিলায় ওপরে আসতে পারত। আমাদের ওই লবিতে দুটো মোড়া পেতে বসত। ঘনঘন তার যাতায়াত ছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এরাই এই হত্যাকাণ্ডটা চালাল, মোস্তাক তো মন্ত্রী ছিল। পরবর্তীতে অনেক চেহারা আপনারা দেখেছেন, যারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। অনেক বড় বড় নীতির কথা এখন বক্তৃতায় শোনায়, তারা কী ছিল? তারা কী এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল না? তারা ভেবেছিল এইভাবেই বোধহয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে। তারা ক্ষমতায় টিকিনি।

‘মোস্তাক নিজেকে অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণ দেয়ার পরপরই জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করল। জিয়াউর রহমান কীভাবে তার এত বিশ্বস্ত হলো যে তাকেই সেনাপ্রধান করল? সেটা কর্নেল ফারুক-রশীদ বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিল, সেই ইন্টারভিউ থেকেই আপনারা জানতে পারেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, তারা যে জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে, জিয়ার কাছ থেকে তারা ইশারা পেয়েছে এবং জিয়া যে তাদের আশ্বস্ত করেছে; এগুলো করলে পরে সমর্থন পাবে সেটা তো তারা নিজেরাই বলে গেছে। এরা কারা ছিল? এরা কি স্বাধীনতা চেয়েছিল? এরা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করত? এরা কি যে নীতিমালা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল তাতে বিশ্বাস করত? তারা তা করত না।

আলোচনা সভা সঞ্চালন করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন।

আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন