চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় গ্রেপ্তার অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যের কব্জি বিচ্ছিন্নকারী সন্ত্রাসী কবির আহমদ আগে থেকেই ছিলেন দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া। এলাকায় জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি। কেউ সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বাধা দিলে তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন।

বৃহস্পতিবার রাতে বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কবির আহমদ ও তার সহযোগী কফিল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭। শুক্রবার এ ব্যাপারে ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

চট্টগ্রাম নগরে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

র‌্যাব জানায়, সন্ত্রাসী কবির আহমদকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় লোহাগড়া থানা পুলিশের একটি দল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবির অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হন। প্রথমে তিনি তার বাসা শনাক্তকারীকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। পরে পুলিশ সদস্য জনি বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করেন কবির। এতে জনির বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় পুলিশ সদস্য শাহাদত হোসেনকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যান কবির।

খন্দকার আল মঈন বলেন, কবির স্থানীয় এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। এলাকায় জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছেন। কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বাধা দিলে তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন। প্রথমিকভাবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রটি এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কেনা। তার নামে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারির মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে। আর এই ঘটনায় তার নামে আরও তিনটি মামলা হবে।

র‌্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম লোহাগাড়া বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকা অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি কবির আহমদ ও তার সহযোগী কফিল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭। অভিযান চলাকালে গ্রেপ্তার কবির কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে র‌্যাব সদস্যদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে এক র‌্যাব সদস্য আহত হন। পরে পাল্টা গুলি চালায় র‌্যাব। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কবিরকে উদ্ধার করা হয়।

কবিরের প্রধান সহযোগী কফিলও এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন সময় পাশ্বর্তী দেশ থেকে মাদক নিয়ে এসে চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহের সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। গ্রেপ্তার কবিরের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী কফিল। তার নামেও বিভিন্ন থানায় মাদক, হত্যাচেষ্টা ও মারামারি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, ঘটনার পর কবির তার সহযোগী কফিলকে নিয়ে বান্দরবানের দক্ষিণ হাংগর এলাকার একটি দুর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। পরে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে কবির তার সহযোগীসহ দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে ফের লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেন। সর্বশেষ গত ১৯ মে রাতে গ্রেপ্তার হয় তারা।

এসময় তাদের কাছ থেকে পুলিশ সদস্যদেরকে জখমে ব্যবহৃত একটি দা, একটি ওয়ান শুটার গান, ৩ রাউন্ড গুলির খোসা, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ২টি হাসুয়া, একটি ছুরি, ১৮০ পিস ইয়াবা, ২টি মোবাইল ও ২টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এদিকে গত ১৬ মে মোহাম্মদপুরে আল মানার হাসপাতালে চিকিৎসক সাজেদুল রেজা ফারুকীর দীর্ঘ ৯ ঘণ্টার ৪০ মিনিট সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পুলিশ সদস্য জনির বিচ্ছিন্ন কব্জিটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হন।





০ মন্তব্য

আরও পোস্ট পড়ুন

মতামত দিন