স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে যে স্থবিরতার পরিস্থিতি ছিলো সেটার উন্নতি হয়েছে। তবে তা জনগণের চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছেনা। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব। ঐ সময় অনেক থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে পরবর্তী সময়ে অভিযান চললেও এপর্যন্ত আশানুরূপ সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এগুলো উদ্ধারের সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি সম্পর্কিত থাকায় একাজে গতিবৃদ্ধি করা দরকার। সাধারণ মানুষের মাঝে মব-জাস্টিসের নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কেউ অপরাধী হলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। পুলিশ সাদাপোষাকে থেকে কাউকে অ্যারেস্ট করতে পারবে না। কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন পুলিশের কাছে কোনভাবে হয়রানি না হন, আবার কোন দোষী ব্যক্তি যেন ছাড় না পায়। সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতির সাথে জড়িত হবেন না। সমাজ ও রাষ্ট্রের বড় ব্যাধি হলো ঘুষ। এটি বন্ধ না হলে দেশের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া কঠিন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ ও বদলিতে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
তিনি আজ (সোমবার) দুপুরে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের পাশর্^বর্তী দেশের অনেক মিডিয়া মিথ্যাঘটনা তৈরি করে প্রচার করছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোকে সত্যঘটনা তুলে ধরতে হবে। তাহলেই তাদের অসত্য প্রচার সবার সামনে দৃশ্যমান হবে। কোন অবস্থাতেই যেন গুজব না ছড়ায়। এদেশ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে কোন সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নেই, আমরা সবাই বাংলাদেশী। আইন সবার জন্য সমান। এবছর কোন অঘটন ছাড়াই দেশব্যাপী দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হচ্ছে। আগামী রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, খুলনা নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০৫ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকী, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার, ডিজিএফআই এর কর্ণেল সৈয়দ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক বিপিএম।
সভায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, খুলনা রেঞ্জ পুলিশ, রেঞ্জস্থ সকল জেলার পুলিশ ইউনিট, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলের ছাত্র প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
উপদেষ্টা বিকেলে অতিরিক্ত পরিচালক খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার খুলনা অঞ্চলে কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন।