প্রশাসনের শীর্ষ দুই পদ শূন্য হচ্ছে আগামী মাসে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। তাঁদের জায়গায় কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাধারণত এ দুই পদে ধারাবাহিকতায় থাকা সিনিয়র কর্মকর্তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় আসছে ঘুরেফিরে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুটি পদে নিয়োগের বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনপ্রশাসনের শীর্ষতম পদ। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির সবচেয়ে সিনিয়র সচিবকে এ পদে নিয়োগের রীতি আছে। গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে কে নিয়োগ পাবেন, এ ধারণা পাওয়া যায় বেশ আগেই। এবারও তেমন নাম শোনা যাচ্ছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোর নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে। এই মুহূর্তে প্রশাসনে নিয়মিত চাকরিতে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এ তিনজনের মধ্য থেকে শীর্ষ দুই পদে নিয়োগ পাবেন, এমন আলোচনা আছে।
প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, যেহেতু প্রশাসনে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন নিরুৎসাহিত করা হয়, তাই সর্বজ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তা শীর্ষ দুই পদ পাবেন। অর্থাৎ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে কবির বিন আনোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে মাহবুব হোসেন নিয়োগ পাবেন। তবে ভিন্ন একাধিক সূত্র মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে কবির বিন আনোয়ারের নাম উল্লেখ করলেও মুখ্য সচিব পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের নিয়োগ পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। তাদের দাবি, তোফাজ্জল হোসেন মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। তাই মুখ্য সচিবের দায়িত্ব বিষয়ে অনেকটাই তাঁর জানা। সে হিসেবে তাঁকে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নিয়োগের অনেক আগেই এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এবার সে ধরনের ঘোষণা আসেনি। কবে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে, তাও নিশ্চিত জানা যায়নি। গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্? উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রজ্ঞাপন জারির কোনো নির্দেশ পাননি। নির্দেশনা এলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম পরপর দুইবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়ারুল ইসলামকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগ দেন তিনি। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে তাঁর স্বাভাবিক সময় পূর্ণ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর এক বছরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের বিশেষ বিসিএসে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। একাধিকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ায় টানা ৪০ বছর চাকরিতে আছেন। এবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ থেকে বিদায় নিশ্চিত হলেও খন্দকার আনোয়ারকে অন্য কোনো মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখা যেতে পারে। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের বড় প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর স্বার্থে এটা করা হতে পারে। এর আগের দুই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এবার সেই পদে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে মনোনয়ন না দেওয়ায় এমন আভাস পাওয়া গেছে।
মুখ্য সচিব পদের চুক্তি শেষ হলেও সরকারের সঙ্গে ড. আহমদ কায়কাউসের সম্পর্কের ইতি ঘটছে না। তাঁকে সরকারের মনোনয়নে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্য সচিব হিসেবে ড. কায়কাউসের সর্বশেষ অংশগ্রহণ ছিল।
সংবাদ দৈনিক সমকাল।