স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে ধারণ করতেন। আজকে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আপনারা এখানে মুজিব কর্নার স্থাপন করার আয়োজন করেছেন সেজন্য আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এটা দেখবে। সবাই জানবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা। যে জাতি ইতিহাস জানে না, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না সে জাতি কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।
আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি ২০২৩) সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে মুজিব কর্নার উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
মুজিব কর্নারের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আমিনুল ইসলাম খান ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধ অবতীর্ণ হয়েছিলাম। মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ভাষণ, মার্চের প্রত্যেকটা দিনের কথা আমার মনে পড়ে। তাঁর ডাকে আমরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে গেলাম। আমরা মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করতাম। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটি জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী ৩,০৫৩ দিন তিনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। এর বাইরেও বহুদিন এমন হয়েছে যে, যেদিন জামিন পেয়েছেন সেদিনই আবার গ্রেফতার হয়েছেন। আর পাকিস্তানের কারাগারে প্রায় দীর্ঘ ৯ মাস বন্দি ছিলেন।
তিনি বলেন, যার ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত, যার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বদলে গিয়েছে, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় দেশ হয়েছে, তিনি আর কেউ নন বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের সবকিছুতেই আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। তিনি যা যা ঘোষণা করেছিলেন তার সবগুলো একে একে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে যখন একটা ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার জাতির পিতা ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন, যখন বাংলাদেশে প্রাণের সঞ্চার হলো তখন তাঁকে প্রাণ হারাতে হলো। স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্তে এই ঘটনা ঘটেছিল। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার দেখার প্রতীক্ষায় ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা করে আমাদের কালিমামুক্ত করেছেন। হৃদয়ে যে ক্ষত ছিল তার কিছুটা হলেও তিনি উপশম করেছেন।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, আজকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ডিএমপির প্রবেশ মুখে সুন্দর একটি কর্নার করা হয়েছে এবং সেটি উদ্বোধন হচ্ছে আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। এটা খুবই সুচিন্তিত পরিকল্পনা। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। যেন মাকে হারিয়ে ফেলা এক শিশু দীর্ঘ সময় পর খুঁজে পেয়ে যেভাবে আবেগে আপ্লুত হয় তেমনি আমরা ক্রন্দনসিক্ত বঙ্গবন্ধুকে দেখি। তিনি বারবার চোখ মুছছেন, তার পাশে জাতীয় চার নেতা রয়েছেন, অন্যান্য নেতৃবৃন্দ রয়েছেন, তাদের জড়িয়ে ধরছেন। হিমালয় সদৃশ বিশাল মানুষটি একটি শিশুর মত মাকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে বিহ্বল হচ্ছেন। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দাঁড়িয়েও জাতিকে আলোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের কী করতে হবে, কীভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, সবকিছুই কিন্তু তাঁর বক্তব্যের মধ্যে ছিল।
আইজিপি বলেন, আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি যেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন হয়ে দেশে এসেছেন। যে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে রেসকোর্স ময়দানে আসা যেত কিন্তু জনস্রোতের কারণে তাঁর আসতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহবানে প্রথম বুলেট রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে বীর পুলিশ সদস্যগণ নিক্ষেপ করেন। ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশ করেছিল এটা বাংলাদেশ পুলিশের জন্য গৌরবের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় তার দায়িত্ব পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার জন্য জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, আগুন-সন্ত্রাস যে কোন অপপ্রয়াস পুলিশ রুখে দিয়েছে। আগামী দিনেও আইন-শৃঙ্খলা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার মতো যেকোনো অপপ্রয়াস রুখে দিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পূর্ণতা পায়। সে জন্য আমরা আজকের এই দিনটিতে মুজিব কর্নার উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রায় ১৩ বছর কারাভোগ করেছেন। যাঁর কন্যার হাত ধরে আজকে বাংলাদেশ অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা সেই দেশের নাগরিক হিসেবে আজ তার সুফল ভোগ করছি। আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে, মননে সর্বদা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিরাজমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সর্বপ্রথম পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বুলেট নিক্ষেপ করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ শুধু ১৯৭১ সালেই নয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারকে হত্যা করা হয়, সে সময় বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারকে রক্ষার জন্য পুলিশ সদস্য এ এস আই সিদ্দিকুর রহমান নিজের জীবন আত্মত্যাগ করেছেন। জাতির প্রত্যেকটি ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। কোন অপশক্তি যেন আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য সর্বদা প্রস্তুত আছি।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।