★★★
সিটিজেন জার্নালিষ্ট(জিমি):
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের একটি শিশুও পথশিশু থাকবে না। প্রতিটি শিশু লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযুক্ত হবে। এদেশের প্রতিটি দরিদ্র মানুষ ঘর পাবে, খাদ্য পাবে, চিকিৎসা পাবে, সুন্দর জীবন পাবে। এদেশের প্রত্যেক মানুষ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে।
শনিবার বঙ্গবন্ধুর ৯৮ তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বত্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন- ক্ষধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা, সেই পথেই আমরা আরও একধাপ এগিয়েছি। তাই আজ জাতির পিতার জন্মদিনে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের এই সুখবর আমাদের জন্য এক বিরাট সফলতা বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন- ভারত, শ্রীলংকা, এমনকি পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ উন্নয়নশীল দেশ… আমরা একধাপ পিছিয়ে পড়েছিলাম। আজকে, আমরা খবর পেয়েছি; আমরা পিছিয়ে পড়ে নেই। এই অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে সমানতালে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এর মধ্যে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমি বিশ্বাস করি, আমরা তা করতে পারব। এ সময় তিনি শিশুদের মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করার তাগিদ দেন। উল্লেখ করেন শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের উপবৃত্তি ও বিশেষ ভাতার কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলা যেন ভিক্ষুকমুক্ত হয়, সে ব্যবস্থা করেছি আমরা। গ্রামেও যেন উন্নত জীবনযাপন করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের ভবিষ্যৎ যেন সুন্দর হয়, সেজন্য আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি। তারাই এদেশকে গড়ে তুলবে, এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শিশুদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আজকের শিশুরা আগামী দিনের, যারা ভবিষ্যৎ কর্ণধার এ দেশের। তাদের কেউ প্রাইমমিনিস্টার হবে আমার মতো, কেউ বড় বড় চাকরি করবে, কেউ বিভিন্ন জায়গায় যাবে, উন্নত হবে, এ দেশকে গড়ে তুলবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ শিশু সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিশু আরাফাত হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। স্বাগত ভাষণ দেন শিশু প্রতিনিধি প্রিয়ন্তী সাহা পিউ। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম, ঢাকা এবং গোপালগঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার বজলুল আহমেদ এবং মোখলেসুর রহমান সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিশু প্রতিনিধি সঞ্চিতা বিশ্বাস মনি ও এনামুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রত্যেকে আমাদের শিশু থেকে যুবক শ্রেণী কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে মেশে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। যেন কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারে। তারা যেন সুস্থ জীবন পায়। আর বাবা-মা, ভাইবোনকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারে, তারই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, কোনো ছেলেমেয়ে যেন বিপথে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি সবইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ৯৮তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবসে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বাঙালি জাতির পক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদর্শন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সমাধিতে ফাতিহা পাঠ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহতদের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। পরে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু ভবনে চলে যান এবং সেখানে কিছু সময় কাটান। এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছেন। সকাল ১০টা ৫ মিনিটে মাজার কমপ্লেক্সে তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে অভ্যর্থনা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা ১১টায় রাষ্ট্রপতি টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। দিবসটির স্মরণে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তার রচিত এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকাশিত ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ শীর্ষক প্রন্থের মোড়ক উšে§াচন করেন। এ সময় শিশু একাডেমির পরিচালক আনজির লিটন উপস্থিত ছিলেন। ‘উঠবো জেগে ছুটবো বেগে’ শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ৭ মার্চ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে একটি বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং ‘আমার ভাবনায় ৭ মার্চ’ শীর্ষক শিশুদের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন করেন। তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালিপাড়ার দু’জন দুস্থ মহিলার মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোরদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, মুহা. ফারুক খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, শেখ হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী, শেখ জুয়েল, শেখ কবির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান প্রমুখ। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।