বাবা আমার সরকারী চাকরী করতেন ঢাকায়। আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগজ্ঞ।
তখন আমরা ছোট। রবিবার অফিস বন্ধ থাকত। শনিবার ছিল হাফ অফিস। বাবা শনিবার আসতেন, আর সোমবার সকালে চলে যেতেন।
শনিবার স্কুল থেকে ফিরেই শামীমদের তেতুল তলায় অপেক্ষা করতাম বাবার জন্য। বাবাকে দেখা মাত্রই ছুটে গিয়ে হাতের ব্যাগটা নিয়ে নিতাম। ব্যাগে থাকত খাবার; ঢাকা থেকে আনা। ঘরে ঢুকে খুলতে দেরি হয়তো না। মা বলতেন-একবারে সব খেয়ে ফেলিস্ না।
বাবা মানেই স্বাধীনতা। সীমাহীন আদর। লেখাপড়া প্রায় বন্ধ। মা রাগ করতেন। বলতেন, ছেলে-পেলে আদরে আদরে বৈদর হবে। বৈদর শব্দ অভিধানে নেই। এটি বাঁদরের অপভ্রংশ।
মার উপর রাগ হতো। এখন বুঝি। মায়ের শাসনটুকু না থাকলে বড় জোর গাঁজাখোর হতাম। এখন আর যাই হোক নিজের রোজগারটুকু তো করে খেতে পারি। বাবার আদর না থাকলেও জীবনের শূন্যতা থেকে যেতো। আদর-শাসনে ছোটকাল ছিল ভীষণ সুন্দর।
পুলিশের চাকরী হলো। সারদা চলে আসার দিন বাবা-মা কাঁদলেন। এর আগেও অনেকগুলো চাকরী করেছি। পুলিশ চাকরীর ঝুঁকিতে তারা উৎকন্ঠ।
আরো নিশ্চই অনেকবার সন্তানের কল্যাণে বাবা-মা কেঁদেছেন।
নিজে যখন বাবা হলাম, তখন সেই অনুভূতির কিছুটা বুঝলাম। তবুও কি বাবা-মার সম্মানটুকু দিচ্ছি?!!?
না।!!!
মাঝে মধ্যেই বাবা-মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। পরে খারাপ লাগে।
কতটা অকৃতজ্ঞ আমি!!
লেখক :মোঃ আমিনুল ইসলাম, ডিআইজি( প্রশাসন এন্ড ডিসিপ্লিন) ,পুলিশ হেড কোয়ার্টাস, ঢাকা।