‘নারী পুলিশের গৌরবময় যাত্রা ও অর্জন ১৯৭৪-২০২২’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন-২০২২।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে আজ (৩০ নভেম্বর ২০২২) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম।
বিপিডব্লিউএন’র সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি আমেনা বেগম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম অনুষ্ঠানে তার পুলিশ হয়ে ওঠার গল্প শোনান।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, বিপিডব্লিউএন’র বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যাগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংস্থা ও ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের নারী সদস্যরা অনলাইনে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে স্পেশাল ব্রাঞ্চে সর্বপ্রথম ১৪ জন নারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে এক যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপে নারী পুলিশের সংখ্যা ধাপে ধাপে বেড়ে বর্তমানে ১৫ হাজার ৫৬১ জনে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে পুলিশিংয়ের কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারী পুলিশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। পুলিশের নারী সদস্যরা সাইবার অপরাধের শিকার নারীদেরকে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী ক্যাম্পে নারী ও শিশুর নিরাপত্তায় পুলিশের নারী সদস্যরা আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, মামলা তদন্ত, ফরেনসিক, জঙ্গি দমন, গোয়েন্দা কার্যক্রম, বিমান চালনা, ভিভিআইপি প্রটেকশন, ইমিগ্রেশন সর্বোপরি জাতীয় জরুরি সেবা- ৯৯৯ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের পুলিশের নারী সদস্যরা কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন।
তিনি বলেন, বিপিডব্লিউএন নারী পুলিশের পেশাগত উন্নয়নে যেমন অবদান রাখছে তেমনি সমাজে জেন্ডার ভিত্তিক অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, সরকারের নারীবান্ধব নীতির ফলে দেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশেও নারীর অগ্রগতি সূচিত হয়েছে। নারী পুলিশ সদস্যরা দেশে-বিদেশে তাদের কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। ভবিষ্যতে দেশে নারী নেতৃত্ব আরও এগিয়ে যাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্য মোট পুলিশ সদস্যের ৮.১৯ ভাগ, ভবিষ্যতে তা ৫০ ভাগে উন্নীত হবে।
আইজিপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে প্রথম ১৪ নারী সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে এক নবযাত্রার সূচনা করেছিলেন। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহে ১৯৯৯ সাল হতে পর্যায়ক্রমে পুলিশে নারী সদস্য সংখ্যা বেড়েছে, যা বর্তমানে মোট পুলিশ সদস্যের শতকরা ৮.১৯ ভাগ।
তিনি বলেন, নারী পুলিশ বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের নারী পুলিশের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি থানায় নারী ও শিশু ডেস্ক চালু করা হয়েছে। ফলে নারীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার আইনি প্রতিকার পাচ্ছেন।
পুলিশ প্রধান বলেন, বিপিডব্লিউএন নারী পুলিশের দক্ষতা ও পারদর্শিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ায় সবাইকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্তির মাধ্যমে পেশাদারিত্ব অর্জন ও নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্বের উন্নয়নেও সংগঠনটি কাজ করছে।
আইজিপি বলেন, ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ পুলিশিং’ অনলাইন মডিউল কার্যকর হলে পুলিশ সদস্যদের এসডিজি’র অন্যতম লক্ষ্য জেন্ডার প্যারিটি ও সচেতনতা আরো সুদৃঢ় হবে।
বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনে অর্জিত জ্ঞান নারী পুলিশের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা অর্জনে আরও সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইজিপি।
অনুষ্ঠানে ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ পুলিশিং’ অনলাইন মডিউল প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের অনন্য অবদান নিয়ে রচিত ‘পুলিশ উইমেন ইন ব্লু হেলমেট : টেলস অব সাকসেস অ্যান্ড প্রাইড’ এবং অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল আইজি ফাতেমা বেগমের লেখা ‘আমার পুলিশ হওয়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী পাঁচ জন নারী পুলিশ সদস্যকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া, নারী পুলিশের সাফল্য ও দক্ষতার ওপর একটি তথ্যবহুল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।