“পুলিশ আপনার বন্ধু নয়”
বিশ্বাস করুন সত্যি বলছি পুলিশ আপনার বন্ধু নয়; পুলিশ’কে যদি আপনি বন্ধু ভাবেন তাহলে ভুল করবেন। পুলিশ আপনার বন্ধু নয়; পুলিশ আপনার বন্ধুর চেয়েও বেশি। বন্ধু তো তাকেই বলে যে আপনার সু-সময়ে আনন্দ এবং দুঃসময়ের কষ্ট’কে ভাগ করে নেয়। আমরা আপনার সু-সময়ের ভাগিদার না হতে পারলেও দুঃসময়ে আমাদের কাছে পাবেন বিশ্বস্ত সহচারীর মত। আমাদের প্রায় ০২(দুই) লক্ষ সদস্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে আপনাদের সেবা দিতে। রাত ১২.০০ টায় আপনার বাসায় যখন হ্যাপি বার্থডে কলরবে মুখরিত, আপনার আদরের সন্তান যখন জন্মদিনের উপহার সামলাতে ব্যস্ত তখন আপনার বাড়ীর পাশেই থানা ভবনে আমরা নিরবে আমাদের সন্তানের জন্মদিন উপেক্ষা করে প্রস্তুতি নিই বিশেষ কোন অভিযানের। আমাদের সন্তানেরা জন্মদিনে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যায়; দায়িত্বের প্রয়োজনে আমাদের ঘরে ফেরা হয়না। পহেলা বৈশাখে অথবা ভালোবাসা দিবসে আপনি যখন আপনার প্রিয় মানুষটার সাথে বাসন্তী সাজে ঘুরে বেড়ান; আপনার তখন মনে হয় জীবন সুন্দর অথচ তখন রাস্তার পাশে আপনাদের নিরাপত্তা ডিউটিতে নিয়োজিত সদ্য বিবাহিত কনস্টবলটার বুকটাও হাহাকার করে ওঠে; বিশ্বাস করুন আমাদেরও ইচ্ছা করে প্রিয় মানুষটার হাতে হাত রেখে জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজতে কিন্তু আমরা সেই ক্ষণিকের হাহাকার চাপা দিয়ে ফেলি মোটা কাপড়ের ইউনিফর্মের নিচে। আমরা আমাদের স্ত্রী’দের অবদার’কে সু-কৌশলে এড়িয়ে যাই কারন পুলিশ সার্ভিস কোন চাকরি নয, এটি একটি দায়িত্ব আর এই গর্বিত বাহিনীর একজান দায়িত্ববান সদস্য হিসেবে আমাদের কাছে পারিবারের চেয়ে দেশ এবং দেশের জনগনের আবদার বেশি অগ্রাধিকার পায়। বছরে সরকার আমাদের জন্য মাত্র ২০ দিন ছুটি বরাদ্দ রেখেছেন; আপনি আপনার নিকটস্থ থানায় গিয়ে খোঁজ নিলে অবাক হবেন আমাদের ৯০% সদস্যই দায়িত্বের জন্য এই ২০ দিন ছুটিও পুরোপুরি ভোগ করতে পারেননা। আবাসন সমস্যা, যানবাহনের সংকট তো বোনস হিসেবে আছেই; পাশাপাশি নেই কোন নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা। আমরা মানবাধিকার কিভাবে রক্ষা করব? আমরা নিজেরাই তো মানবাধিকার লংঘনের স্বীকার অথচ হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও হাসিমুখে আপনাদের জন্য নিয়োজিত হয়ে যাই ডিউটিতে । ঈদের আগেরদিন আপনি যখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঈদে কি কি আইটেম বাদ পড়েছে বা কাকে কি উপহার দেবেন সেই চিন্তায় বিভোর ঠিক তখন আপনার মত একই ব্যস্ততা আমাদেরও থাকে তবে তা ঈদ নিয়ে নয় বা ঈদের শপিং নিয়েও নয়, ঈদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই তখন আমরা হিমশিম খাই। ঈদের দিন সকালে যখন আপনি নতুন পাঞ্জাবী পরে সকলের সাথে শুভ্ছো বিনিময় করতে করতে আপনার সন্তানের সাথে ঈদগাহে যান; আপনি ঈদগাহে আসবেন বলে আমরা তারও ৩ ঘন্টা আগে ঈদগাহে পৌছে যাই আপনার নিরাপত্তায়।আমাদের পরিবার বা আপনজন নয় তখন আপনাদের নিরাপত্তায় আমাদের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ঈদের জামাত শেষে মোনাজাতে সবাই তাঁদের আপনজনের মঙ্গল কামনা করেন; বিশ্বাস করুন নিজের পরিবার’কে দূরে রেখে আপনাদের নিরাত্তায় নিয়োজিত এই আমাদের মঙ্গলের কথা কারো মুখেই উচ্চারিত হয়না; তবুও আমাদের কোন অভিযোগ নেই। কতরাত যে আপনারা নিরাপদে ঘুমাবেন তাই আমরা নির্ঘুম কাটিয়েছি তাঁর খবর একমাত্র রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট আর বেওয়ারিশ কুকুর ছাড়া কেও জানেনা। হীম শিতল রাতে আপনি যখন উষ্ণতায় নিরাপদে নিজ গৃহে গভীর নিদ্রায় মগ্ন তখন কোন হাইওয়ে দিয়ে আমাদের এই সাহসী যোদ্ধাদের বহনকারী গাড়ীট ঘন্টায় ১০০ অথবা তারও বেশি গতিবেগে অজানা গন্তব্যে ছুটে চলেছে। শুধুমাত্র সরকারী ইউনিফর্ম গায়ে আমাদের এই অকুতভয় সৈনিকেরা তখন যুদ্ধ করে চলে বাতাস আর শীতের সাথে। আমাদের প্রত্যেকটা সদস্য’ই তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় যৌবন’কে অতিবাহিত করে আপনাদের সেবাই। চাকরি জীবনের শেষে আমরা যখন বৃদ্ধ হয়ে আমাদের আসল ঠিকানায় ফিরি তখন আমাদের গ্রাস করে একরাশ শূন্যতায়। আমরা না পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা; না পেয়েছি পরিবারের ভালোবাসা। আমাদের জীবনের পাওনার খাতাটা একদমই শূন্য।দায়িত্ববোধ আর দেশপ্রেমের কাছে এভাবেই প্রতিদিন আমাদের কতশত ইচ্ছা হার মানে তার খোজ কজনইবা রাখে? আমাদের প্রত্যেকটা সদস্য’ই বাস্তব জীবনে একেকজন হিরো, আমাদের এই হিরোদের প্রত্যেকদিনের এমন হাজারো ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠছে অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ। আমাদের কিছু অসাধু সদস্যে’র কারনে মাঝে মাঝে পুলিশ পেশাটি বিতর্কিত হয়ে ওঠে, প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমাদের ত্যাগ কিন্তু ব্যক্তির দায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী কখনই বহন করবে না। আসুন আমরা সবাই পুলিশের ভালোকাজগুলোকে উৎসাহিত করি; আপনাদের উৎসাহ আমাদের কর্মউদ্দীপনা হাজারগুন বাড়িয়ে দেয়।
ছবিতেঃ খুলনা জেলা পুলিশ সুপার জনাব এসএম শফিউল্লাহ বিপিএম, বাসের যাত্রীদের নিরাপত্তা সম্পর্কে অবহিত করছেন এবং ছোট ছোট সোনামনিদের চকলেট ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।